Singur

টাটা গিয়েছে মমতার আন্দোলনেই, ব্যাখ্যা রবীন্দ্রনাথের, ওঁর মাথা ঠিক নেই, খোঁচা বেচার

টাটা গোষ্ঠী বিদায় নিয়েছে আন্দোলনের ফলে। যার নেতৃত্বে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই মনে করেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছে জোড়াফুল শিবির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২২ ১৫:১৯
Share:

সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে তরজায় রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও বেচারাম মান্নার। — ফাইল চিত্র।

সিঙ্গুর থেকে টাটা গোষ্ঠী বিদায় নিয়েছে আন্দোলনের ফলে। যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই মনে করেন এক সময়ে সেই জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা সিঙ্গুরের ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। গত বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছে জোড়াফুল শিবির।

Advertisement

সিঙ্গুর-পর্ব নিয়ে বুধবার শিলিগুড়িতে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান থেকে মমতা বলেন, ‘‘আমি টাটাকে তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে। ওরা জোর করে জমি নিতে গিয়েছিল। আমরা ফিরিয়েছি।’’ এই মন্তব্যের আঁচে তপ্ত বামশিবির। প্রায় দেড় দশক আগে রাজ্যে ঘটে যাওয়া সেই পর্ব নিয়ে বৃহস্পতিবার ব্যাখ্যা দেন সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান কিছুই না করে যেটা ঘটনা তা উল্লেখ করছি। জমি আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর নেতৃত্বে কৃষক এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে একটা বোঝাপড়া হয়েছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং শিল্পমন্ত্রী ছিলেন নিরুপম সেন। অপর পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমরাও ছিলাম। তখন এই রকম ঠিক হয়েছিল যে, স্বেচ্ছায় যত জমি কৃষকরা দিয়েছেন তাতে টাটাগোষ্ঠী শিল্প করবেন। এ নিয়ে চুক্তিও হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা পলিটব্যুরোতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু পলিটব্যুরো সেই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা একটা সংশোধিত প্রস্তাব কৃষকদের দেন। সম্ভবত এই ঘটনাটিকে অবলম্বন করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে চেয়েছেন যে, সিপিএম টাটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং টাটা চলে গিয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাবটি আসলে টাটার কাছে যায়নি। কারণ কোনও পক্ষই কোনও প্রস্তাব ঠিক করতে পারেনি। টাটা চলে গিয়েছে সিঙ্গুর আন্দোলনের ফলেই। টাটার কাছে এই প্রস্তাব না যাওয়ায় তারা কী করে বুঝবে সমঝোতা হয়েছে? ফলে তার প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ কোনও প্রশ্নই আসেনি।’’

একই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সংযোজন, ‘‘সুতরাং আমি বলব, টাটা চলে গিয়েছে আন্দোলনের ফলেই যার নেতৃত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আন্দোলনের ফলেতেই টাটা চলে গিয়েছে।’’ একই সঙ্গে সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই বলেন, ‘‘পুলিশের অত্যাচারে, মাথায় বাড়ি মেরে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি কেড়ে নিয়ে শিল্প এখনও চাই না আমরা। তখনও চাইনি। সমঝোতার মাধ্যমে যদি টাটা এখানে শিল্প করত, ন্যানো কারখানা করত ভাল হত। তাতে শিল্পের পরিবেশ গড়ে উঠত। সিঙ্গুর-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে হয়তো শিল্পের পরিবেশ অন্য রকম হতে পারত। কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি।’’

Advertisement

রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিঙ্গুর কেন্দ্রে তাঁরই প্রতিদ্বন্দ্বী বেচারাম মান্না। ‘মাস্টারমশাই’কে নিশানা করে বেচা বলেন, ‘‘তিনি যখন আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করছিলেন তখন তাঁর মস্তিষ্ক ঠিক ছিল। এখন বয়স হয়েছে, তিনি কোথায় আছেন, কী অবস্থানে আছেন তা নিজেই জানেন না। তাঁর কথা মানুষ বিশ্বাস করে না বলেই সিঙ্গুরের মানুষ তাঁকে পরাজিত করেছে। তাঁর কথার কোনও মূল্য নেই।’’

সিঙ্গুর-পর্বকে কেন্দ্র করে মমতার মন্তব্য নিয়ে বেচারাম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তা ঠিক। কারণ বাংলার মানুষও জানে সিপিএম সিঙ্গুরে কারখানা করার অছিলায় রাজনীতি করছিল। তাদের সত্যিই শিল্প গড়ার মানসিকতা থাকলে গোপালকৃষ্ণ গান্ধী রাজ্যপাল থাকাকালীন রাজভবনে যে চুক্তি হয়েছিল তা মেনে কাজ করত। তাতে সিঙ্গুরে কৃষিও থাকত, শিল্পও থাকত। সিপিএম রাজনীতি করতে এসেছিল। তারা বুঝতে পারেনি সিঙ্গুরের মাটি শক্ত মাটি। ওরা এখানকার মাটিকে মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। টাটাকে তারা নিজেরাই সরে যেতে বলেছিল। সিপিএম সত্যি কথা বললে ওদের পশ্চিমবাংলায় এই হাল হত না। ওদের প্রায়শ্চিত্ত করতে এখনও অনেক দিন লাগবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement