মূলত সাইকেল, মোটরবাইক, বাস, লরি এবং চারচাকা গাড়ির মতো যানবাহনগুলির পার্কিং ফি বাড়াচ্ছে পুরসভা। নির্দিষ্ট যানবাহনের জন্য দিতে হবে নির্দিষ্ট অর্থ। স্থির হয়েছে তার স্তরও।
দিনের বেলায় সব গাড়ি থেকেই দ্বিগুণ বা তিন গুণ পার্কিং আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পার্কিংয়ের সময় বাড়লে সমানুপাতিক হারে বাড়বে অর্থও। পুরসভার মতে, এতে পারিপার্শ্বিক আরও কিছু সমস্যা এড়ানো যাবে।
বেশ কয়েক গুণ বাড়তে চলেছে মোটরবাইকের পার্কিং ফি। আগে দিতে হত ঘণ্টাপিছু ৫ টাকা। এখন সাধারণত ভাবে তা বেড়ে হতে চলেছে দ্বিগুণ, অর্থাৎ ঘণ্টায় ১০ টাকা। কিন্তু ৫ ঘণ্টা বাইক রাখলে পার্কিং ফি বেড়ে হবে ৮০ টাকা। আরও বেশি সময় মোটরবাইক রাখলে ঘণ্টাপিছু দিতে হবে ৫০ টাকা করে।
কলকাতায় চারচাকা গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সে ক্ষেত্রেও বাড়ানো হয়েছে পার্কিং। ঘণ্টায় ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা করা হয়েছে পার্কিং ফি। এ ছাড়া ৫ ঘণ্টার জন্য নেওয়া হবে মোট ১৬০ টাকা। এর পর গাড়ি রাখা হলে ঘণ্টায় ১০০ টাকা করে দিতে হবে ফি।
শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয় যাত্রিবাহী বাস। বাসের ক্ষেত্রেও আদায় করা হবে বাড়তি পার্কিং। আগে তা ছিল ঘণ্টাপিছু ২০ টাকা। এখন তা হতে চলেছে ঘণ্টায় ৪০ টাকা অর্থাৎ দ্বিগুণ। ৫ ঘণ্টা বাস রাখলে দিতে হবে মোট ২৪০ টাকা। তার বেশি হলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় খরচ হবে ২০০ টাকা করে।
কলকাতার বহু জায়গায় রাখা হয় মালবাহী লরি। সেই লরির বাসের মতোই পার্কিংও দ্বিগুণ হারে বাড়তে চলেছে। যাত্রিবাহী বাসের মতো মালবাহী লরির পার্কিংও আদায় করা হবে একই হারে।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডিজিটাল মাধ্যমে আদায় করা হবে এই পার্কিং ফি। ফলে পার্কিং লটে জোর করে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ এড়ানো যাবে বলেই মনে করছে পুরসভা। এর ফলে আরও উন্নত হবে পরিষেবা।
পুরসভার মতে, কলকাতায় রাস্তা ছাড়া পার্কিং লট কম। এই পরিস্থিতিতে বাড়তি পার্কিং আদায় করা হলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে।
পুরসভার মতে, শহর জুড়ে বহু গাড়ি যত্রতত্র ফেলে রাখা হয় নামমাত্র পার্কিং ফি দিয়ে। তার ফলে যানজট দেখা দেয়। দেখা দেয় অন্যান্য অসুবিধাও। এ বার তাতে লাগাম পরানো যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পুরসভার লক্ষ্য, শহরে গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে যানজট কমানো। পার্কিং ফি বাড়লে শহরে গাড়ির ভিড়ে অনেকটা রাশ টানা যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অনেক সময় যেখানে গাড়ি রাখা হয় না, সেখানেও ইদানীং পার্কিং করা হয়। তার ফলে যান চলাচলের সমস্যা দেখা দেয়। বাড়তি পার্কিং আদায় করা হলে মানুষের মধ্যে অহেতুক দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি পার্কিং করার প্রবণতা কমবে।
মনে করা হচ্ছে, শহরে গাড়ির সংখ্যা কমলে রাস্তা আরও গতিশীল হবে। শহর-শহরতলির যানজট এবং ঘিঞ্জি পরিবেশ অনেকটা কাটানো যাবে। এর ফলে বাড়বে কলকাতার ঘণ্টাপিছু গড় গতিবেগও।
পাশাপাশি, নিজেদের আয় বাড়ানোও লক্ষ্য পুরসভার। কারণ, গত চারটি পুরবোর্ডে পার্কিং ফি বাড়েনি। তার ফলে পুরসভার আয় থমকে গিয়েছিল। অথচ গত বেশ কয়েক বছর ধরেই পুরসভার খরচ বেড়েছে। তাই এ বার নজর দেওয়া হয়েছে বাড়তি পার্কিং আদায়ের ক্ষেত্রে। এর ফলে এক ঝটকায় অনেকটা বাড়বে আয়। তাই এ বার বেশ কয়েক গুণ ভারী হতে চলেছে পার্কিং ফি-র পাল্লা।
মনে করা হচ্ছে, পার্কিং ফি বাড়ানো হলে শহরে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কমবে শব্দদূষণ এবং বায়ুদূষণও। তার কারণ, পার্কিং ফি বাড়লে মানুষ গাড়ি কম বার করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
পার্কিং ফি বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারও।
চুলচেরা বিশ্লেষণের পর পার্কিং ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। মিলেছে তার চূড়ান্ত অনুমোদনও।