দলত্যাগী উপপ্রধান। নিজস্ব চিত্র
ক’দিন আগেই বীরভূমে এসে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে জোর লড়াই দিতে বিজেপি কর্মীদের বার্তা দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই আবহেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জেলায় বিজেপির হাতে থাকা একমাত্র পঞ্চায়েতে ভাঙন ধরল।
বুধবার নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বিজেপি ছাড়লেন মল্লারপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, বিজেপির সমীর লোহার। এ দিন সমীর সমাজমাধ্যমে এবং সংবাদমাধ্যমে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন। তবে বিজেপি ছেড়ে অন্য কোনও দলে যাওয়ার কথা তিনি এখনও ভাবেননি বলে জানান সমীর। বিজেপির ময়ূরেশ্বর ১ মণ্ডল কমিটির সভাপতি সমাপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সমীরের দল ছাড়ার ঘোষণায় দলের সংগঠনে কোনও প্রভাব পড়বে না। এই ঘটনাকে কটাক্ষ করেছে শাসক দল তৃণমূল।
তবে সমীর দল ছাড়ার ঘোষণা করলেও তাঁর উপপ্রধান পদ এখনই যাচ্ছে না। পঞ্চায়েত থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও এ ব্যপারে কোনও খবর প্রশাসনিক স্তরে জানা নেই বলে বিডিও (ময়ূরেশ্বর ১) অর্ঘ্য গুহ জানান। সমীরও কিছু জানাননি বলে জানিয়েছেন বিডিও। ১৩ সদস্যের মল্লারপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলগত অবস্থান ছিল বিজেপি ৯ এবংতৃণমূল ৪।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা বিজেপির সাংগঠনিক স্তরে বীরভূম এবং বোলপুর দুটি ভাগ হওয়ার পর বোলপুর সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব পান সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল ওরফে অষ্টম মণ্ডল। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ময়ূরেশ্বর ১ মণ্ডল কমিটি-সহ বিভিন্ন অঞ্চল কমিটির পরিবর্তন হয়। নতুন কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সমীরের সঙ্গে নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরি হয় বলে বিজেপি সূত্রে দাবি। সমীরকে মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের পর্যবেক্ষক-সহ বোলপুর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
সমীরের সঙ্গে দলের টানাপড়েনের কথা মেনেছেন বিজেপির ময়ূরেশ্বর ১ মণ্ডল কমিটির সভাপতি সমাপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘দলবিরোধী কথাবার্তা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য একাধিকবার সমীরের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সেই কারণেই তাঁকে বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে জেলা কমিটির সদস্য পদ ও অঞ্চল কমিটির পর্যবেক্ষক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।তা সত্ত্বেও তাঁর কোনও পরিবর্তন হয়নি।” তাঁর আরও দাবি, ‘‘সমীর উপপ্রধান হয়েও মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার না করেননি। তাই মাস তিনেক আগে সমীরকে শো-কজও করা হয়েছে। কিন্তু উনি কোনও জবাব দেননি।’’
সমীর অবশ্য দাবি করেন, তিনি শো-কজের চিঠি পাননি। কী কারণে শো-কজ করা হয়েছে সে ব্যাপারেও দলীয় স্তরে তাঁকে কোনও কিছু জানানো হয়নি বলে দাবি সমীরের। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘জেলা নেতৃত্ব বছর দেড়েক ধরে দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। দলের নেতারা কোনও কিছু আলোচনা তো দূরের কথা, মিটিং মিছিলেও ডাকেন না। যোগাযোগও রাখেন না।’’ তাই তিনি বিজেপি ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সমীর।
মল্লারপুর বিজেপির সাংগঠনিক দিক থেকে শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত। সেখানে ভোটের আগে এই কোন্দল এবং একজন উপপ্রধানের দল ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণায় সংগঠনে কিছুটা হলেও চিড় ধরবে বলে বিজেপির নেতাকর্মীদের অনেকের দাবি। বিজেপির এই কোন্দলকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক সভাপতি তথা বিধায়ক অভিজিৎ রায় বলেন, ‘‘ওরা বিগত পাঁচ বছরে জনসেবামূলক কোনও কাজ করে নি। পঞ্চায়েতে টাকা পড়ে আছে। এই নিয়ে ওদের নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। আগের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলে জয়ী হয়েছিল। এ বারে পারবে না।’’