এখান থেকেই উদ্ধার করা হয় বাহাদুর বাউড়ির দেহ। নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়ায় ফের হাতির হানায় প্রাণহানি হল। এ বার ঘটনাস্থল বেলিয়াতোড়। মৃতের নাম বাহাদুর বাউরি (৪৫)। বাড়ি বেলিয়াতোড় রেঞ্জের বৃন্দাবনপুর বিটের অধীনে লিগামোচড় গ্রামে। এই ঘটনায় জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, কয়েকদিন ধরে লিগামোচড় ও লাগোয়া কয়েকটি গ্রামে হানা দিচ্ছিল তিনটি ‘রেসিডেন্ট’ হাতি। মঙ্গলবার গভীর রাতে ফের হাতি তিনটি গ্রামে ঢোকে। লিগামোচড় সংলগ্ন পুরুষোত্তমপুরে দু’টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি করে। গ্রামবাসীদের তাড়ায় ভোরের দিকে হাতিগুলি লিগামোচড় গ্রাম লাগোয়া চাষ জমিতে নেমে পড়ে। খবর পেয়ে গ্রামের বাসিন্দারা হাতি তাড়াতে সেখানে যান। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন বাহাদুরবাবু।
পুরুষোত্তমপুরের বাসিন্দা বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, “গ্রামবাসী তিনটি হাতিকে তাড়াচ্ছিলেন। আচমকা একটি হাতি তেড়ে আসে। সামনে থাকা কয়েকজন দৌড়ে পালালেও হাতির সামনে পড়ে যান বাহাদুরবাবু। তাঁকে শুঁড়ে করে তুলে নিয়ে যায় হাতিটি। প্রায় একশো মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে আছড়ে মারে।” ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাহাদুরবাবুর। পরে পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে।
মৃতের মামা জগজ্জীবন বাউরি বলেন, “বাহাদুর চাষ করে সংসার চালাত। ওর মৃত্যুতে গোটা পরিবারটি ভেসে যাবে।” মৃতের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবি তুলেছেন হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষে গঠিত ‘সংগ্রামী গণমঞ্চ’-এর সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায়। পাশাপাশি, ‘রেসিডেন্ট’ হাতিগুলি যাতে লোকালয়ে না ঢোকে তা নিশ্চিত করতে জঙ্গলে হাতিদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুত রাখার দাবিও তুলেছেন তিনি।
শুভ্রাংশুবাবুর অভিযোগ, “একের পরে এক মানুষ হাতির হানায় মারা যাচ্ছেন। এই ঘটনা রুখতে বন দফতরকে সে ভাবে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে না।” ডিএফও (উত্তর) ভাস্কর জেভির আশ্বাস, মৃতের পরিবারকে নিয়মমাফিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
এই নিয়ে চলতি বছরে হাতির হানায় এক মহিলা-সহ পাঁচ জনের মৃত্যু হল। এর আগে বিষ্ণুপুর, গঙ্গাজলঘাটি ও রানিবাঁধে হাতির হামলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত বছর বেলিয়াতোড় রেঞ্জে এক জনের মৃত্যু হয় হাতির হানায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বারবার হাতির হানায় প্রাণহানি ঘটলেও বন দফতর হাতিগুলিকে অন্যত্র সরাচ্ছে না।
ডিএফও বলেন, “বড়জোড়া, বেলিয়াতোড়ের রেসিডেন্ট হাতিগুলিকে তাড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে। শীঘ্রই যাতে সেই কাজ হয়, সে ব্যবস্থা করছি।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলিয়াতোড় রেঞ্জে তিনটি ও বড়জোড়া রেঞ্জের জঙ্গলে চারটি ‘রেসিডেন্ট’ হাতি রয়েছে।