বিজেপিকে তোপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে দিয়ে বিজেপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। পুরুলিয়ার পর বাঁকুড়ার কর্মিসভা থেকেও একই অভিযোগ তুললেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধির পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধেছেন তিনি। একইসঙ্গে বার্তা দিয়েছেন বাঁকুড়ার দলীয় নেতাকর্মীদেরও।সিবিআই, ইডিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিহিংসা মেটাচ্ছে বিজেপি। মঙ্গলবার পুরুলিয়া থেকে এমনই অভিযোগ করেছিলেন মমতা। বুধবারও তাঁর গলায় একই সুর। বাঁকুড়ায় বিজেপিকে নিশানা করে তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, ‘‘আজকে বলছে, কয়লার টাকা খেয়েছে সিবিআই নোটিস দাও। ও গরুর টাকা খেয়েছে ওকে সিবিআই নোটিস দাও। ও গরুর মাংস খেয়েছে ওকে ইডির নোটিস দাও। ও পাঁঠার মাংস খেয়েছে ওকে সিবিআই নোটিস দাও। আর নোটবন্দির আসল টাকা গেল কোথায়? নরেন্দ্র মোদী, আমিত শাহ তোমাকে জবাব দিতে হবে, না হলে গদি ছাড়তে হবে। ২০২৪-এ তোমাদের নো এন্ট্রি। তোমরা আর ক্ষমতায় আসবে না।’’
দেশে গ্যাস এবং পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘গত কাল ৯০ লক্ষ রেলের শূন্য পদ বাতিল করেছে। মানে আস্তে আস্তে দোকানটাকে গুটিয়ে ফেল। রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা, সেল বিক্রি করে দিয়েছে। গম বন্ধ করে দিয়েছে। দেশে গম পাওয়া যাচ্ছে না। আর নির্বাচনের আগে বলে উজালা গ্যাস দেব গরিব মানুষকে। মা-বোনেরা ভাবলেন, আমরা তা হলে ভাল ভাবে রান্না করতে পারব। আজ দেখছেন কোথায় উজালা? ওটা হাওয়ালা। ওটা হাওয়ায় ভেসে চলে গিয়েছে। উজালা আসলে ‘ধোঁকালা’। তাই ধোঁকায় ভেসে চলে গিয়েছে। ৮০০ টাকা দিয়ে সিলিন্ডার কিনতে হবে! গরিব মানুষ কোথা থেকে পাবেন? এর থেকে ঘরে স্টোভে রান্না করা ভাল। আবার স্টোভে যে রান্না করবেন কেরোসিনেরও দাম বাড়িয়েছে। তার চেয়ে কাঠে রান্না করা ভাল। এখন মনে হচ্ছে, সেই পুরনো দিনে ফিরে যেতে হবে।’’
দেশের আর্থিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মমতার অভিযোগ, ‘‘দেশে ৪০ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে। নোটবন্দি যখন করল সকলের লক্ষ্মীর ভান্ডার কিনে নিল। তখনই আমি বলেছিলাম ভাই, এটা বড় কেলেঙ্কারি। এটা মানুষের কাজে লাগবে না। আজ প্রমাণ হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলছে, নোটবন্দি করে ১০২ শতাংশ ৫০০ টাকার নোট ভেজাল হয়েছে।’’
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুর দু’টি আসনই দখল করে বিজেপি। তৃণমূলকে সেই সময়ে ফিরতে হয়েছিল শূন্য হাতে। আবার ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ১২টি আসনের মধ্যে ৮টি দখল করে বিজেপি। ৪টি আসন পায় তৃণমূল। পরে অবশ্য বিষ্ণুপুরের বিজেপি বিধায়ক তন্ময় ঘোষ তৃণমূলে যোগ দেন। ঘটনাচক্রে বুধবার সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে মমতা বলেন, ‘‘আমার মনখারাপ হয়েছিল বাঁকুড়ায় যখন আমরা জিতিনি। বিধানসভায় মাত্র চারটে আসন পেয়েছিলাম আমরা। বাঁকুড়ায় লোকসভাতেও জিতিনি। বিষ্ণুপুরে লোকসভায় জিতিনি। পুরুলিয়ায় গত লোকসভাতেও জিতিনি। তা-ও আমাদের সরকার এসেছে। নিশ্চয়ই আমাদের কর্মীদের ভুল ছিল। অথবা বিজেপির অপপ্রচারের কাছে আমরা মাথা নত করে দিয়েছিলাম। তাই হয়তো আপনারা আমাদের ভুল বুঝেছেন। বিজেপি জেতার পর থেকে এলাকায় একটা কাজ করেছে? এলাকায় দেখতে পান?’’
এই সূত্রেই দলীয় কর্মীদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘আপনারা এক বছর তো কাজকর্ম করেননি মনে হয়। হেরে গিয়ে ঘরে দুঃখ পেয়েছিলেন। আজ দিদি এসে বলে গেল। দিদি যদি হেরে গিয়ে চলে আসতে পারে তা হলে আপনারা কেন বেরোলেন না? দরজায় দরজায় মানুষের কাছে যান, মানুষের হয়ে কাজ করুন, দুয়ারে সরকারের কাজ করুন, পাড়ায় পাড়ায় সমাধানের কাজ করুন, মানুষ কোথায় কী পাচ্ছেন না সেটা ভাল করে দেখুন। চাষি, আদিবাসী, গরিবদের পাশে থাকুন।’’