প্রতীকী ছবি।
উচ্চমাধ্যমিকে সবাই পাশ। মকুব করা হয়েছে কলেজে ভর্তির আবেদনের খরচও। ফলে, স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য কলেজগুলিতে কার্যত আবেদনের পাহাড় জমে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভর্তির আবেদনের সময়সীমা আরও সাত দিন বাড়িয়ে দেওয়ায় চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কিছু কলেজ কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে, সবাইকে কলেজে পড়ার সুযোগ দিতে হবে বলে দাবি করেছে কিছু ছাত্র সংগঠন। এই পরিস্থিতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদন করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে কলেজগুলি।
সূত্রের খবর, বাঁকুড়া জেলার ২৪টি কলেজ ও পুরুলিয়ার ২১টি কলেজের প্রায় সব ক’টিতেই আসনের তুলনায় কয়েক গুণ আবেদন জমা পড়েছে। পুরুলিয়ার পাঁচটি বড় কলেজ পুরুলিয়া শহরের জগন্নাথ কিশোর কলেজ, নিস্তারিণী মহিলা মহাবিদ্যালয়, রঘুনাথপুর কলেজ, মানবাজারের মানভূম কলেজ ও ঝালদার অচ্ছ্রুরাম মেমোরিয়াল কলেজে আসন সংখ্যার থেকে বহু গুণ বেশি আবেদন জমা পড়েছে।
বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের অধ্যক্ষ ফটিকবরণ মণ্ডল শনিবার বলেন, “প্রতি বছরই আমাদের কলেজে আসন সংখ্যার তুলনায় বেশি আবেদন জমা পড়ে। সংখ্যাটা সাড়ে চার হাজারের মধ্যেই থাকে। এ বার তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে সাত হাজারের বেশি। অথচ, আসন সংখ্যা দেড় হাজার।”
বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজে আবেদনের সংখ্যা ন’হাজারে পৌঁছে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ সমীর মুখোপাধ্যায়, যা ওই কলেজের আসন সংখ্যার চার গুণেরও বেশি। বাঁকুড়ার সারদামণি গার্লস কলেজ ও বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজেও আবেদনের সংখ্যা আসন সংখ্যার দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্ত বলেন, “মহিলা কলেজ হলেও ইতিমধ্যে চার হাজার ৮২৯টি আবেদন জমা পড়েছে।’’ রামানন্দ কলেজের অধ্যক্ষ স্বপ্না ঘড়ুই বলেন, “এ বার আবেদনের সংখ্যা অন্য বছরকে ছাপিয়ে গিয়েছে।” কলেজ কর্তৃপক্ষের কথায়, মেধা তালিকা এ বার সফটওয়্যারের মাধ্যমে হওয়ায় তা নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে মাত্রাতিরিক্ত আবেদনের চাপ ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে কি না সেটাই এখন চিন্তার।
খাতড়া কলেজের অধ্যক্ষ তথা তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার জেলা সভাপতি নিত্যানন্দ পাত্র বলেন, “এক-এক জন পড়ুয়া জেলার একাধিক কলেজে ভর্তির আবেদন করেছেন। এ ক্ষেত্রে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় যদি কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তির আবেদন নিত, তা হলে সমস্যা হয়ত অনেকটাই কম হত।” বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়ার ব্যবস্থার প্রস্তাব কোনও কলেজ থেকেই দেওয়া হয়নি। এমন প্রস্তাব দেওয়া হলে, বিবেচনা করা হবে।”
এ দিকে, জেলার ছাত্র সংগঠনগুলির তরফে প্রতিটি পড়ুয়াকেই কলেজে ভর্তির দাবি তোলা হচ্ছে। এ বার কলেজে ভর্তি সঙ্কট হতে পারে বলে ইতিমধ্যেই সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কলেজেগুলিতে আসন সংখ্যা বাড়ানোর দাবি পেশ করেছে ডিএসও ও এসএফআই। ডিএসও-র পুরুলিয়ার সম্পাদক বিকাশরঞ্জন কুমার বলেন, ‘‘উচ্চমাধ্যমিকে আগে পুরুলিয়ার ৬৮-৭২ শতাংশ পড়ুয়া উত্তীর্ণ হত। তখনই বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতেন না। এ বার ১০০ শতাংশ উত্তীর্ণ হওয়ায় ভর্তির সঙ্কট বাড়বে।’’
এসএফআই-এর পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক সুব্রত মাহাতো বলেন, ‘‘কলেজগুলিতে আসন না বাড়ালে ভর্তির ক্ষেত্রে চরম সমস্যায় পড়বেন বহু পড়ুয়া।” তবে টিএমসিপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি কিরীটী আচার্যের দাবি, ‘‘জেলার বড় কলেজগুলিতে বরাবরই আবেদন বেশি পড়ে। জেলায় অনেক কলেজ। ফলে, ভর্তির সমস্যা হবে না।” এসএফআইয়ের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক জয়গোপাল করের মন্তব্য, “রাজ্য সরকারের নীতির ভুলেই এই ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি পড়ুয়াকেই কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। দরকারে আসন বাড়ানো হোক।’’
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “পরিস্থিতির উপরে আমরা নজর রাখছি। কোথাও চাহিদা খুব বেড়ে গেলে, আসন সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না, তা বিবেচনা করা হবে।’’ সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও জানাচ্ছেন, কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু না হলে বোঝা সম্ভব নয় সঙ্কট হচ্ছে কি না। কলেজগুলি সমস্যার কথা জানালে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।