শুশুনিয়া পাহাড়ে ফেলা হচ্ছে এই ধরনের বীজ বোমা। — নিজস্ব চিত্র।
শুশুনিয়া পাহাড়ের বেশির ভাগ অংশ সবুজে ঢাকা। কিন্তু একাংশ এতটাই রুক্ষ্ম যে সেখানে গাছপালা জন্মায় না সে ভাবে। ন্যাড়া সেই অংশ সবুজ গালিচা দিয়ে ঢাকতে এ বার বীজ বোমার পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করল বনদফতর। পরীক্ষামূলক ব্যবহার সফল হলে আগামিদিনে অন্যত্রও রুক্ষ্ম এলাকায় এই ধরনের বোমার ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে বনদফতর।
বহু প্রজাতির গাছ ছাড়াও শুশুনিয়া পাহাড় বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু, সরীসৃপ এবং পোকামাকড়ের অবাধ বিচরণভূমি। সেখানে এক সময় গড়ে উঠেছিল পাথর খোদাই শিল্প। হস্তশিল্পের জন্য সেই পাথর সংগ্রহ করা হত শুশুনিয়া পাহাড় থেকেই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের সেই অংশে তৈরি হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। পাথরের টুকরো ছড়িয়ে থাকায় পাহাড়ের ওই অংশে গাছ জন্মানোর সম্ভাবনাও ক্ষীণ। আইনি ভাবে বর্তমানে শুশুনিয়া পাহাড় থেকে পাথর সংগ্রহ বন্ধ হয়ে গেলেও ওই অংশ ন্যাড়াই রয়ে গিয়েছে। এ বার পাহাড়ের ওই অংশ সবুজে ঢাকতে উদ্যোগী বন দফতর। জানা গিয়েছে মাটি, গোবর এবং জৈব সার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘বোমা’। তার ভিতর রেখে দেওয়া হয়েছে বাবলা, আকাশমণি এবং সুবাবুলের মতো গাছের বীজ। পাহাড়ের রুক্ষ্ম ওই অংশে শয়ে শয়ে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে এমনই গোলা। বনকর্মীদের দাবি, মাটির উপর টুকরো পাথরের মোটা স্তর থাকায় এত দিন বীজ বপন করা হলেও চারাগাছের শিকড় পাথরের খাঁজ বেয়ে মাটি ছুঁতে পারত না। এর ফলে চারাগাছ তৈরি হলেও অল্পদিনের মধ্যেই তা মারা যেত। তবে এ বার বীজ বোমার মধ্যে বীজগুলি থাকায় অঙ্কুর বার হওয়ার পর বোমার মধ্যে থাকা মাটি থেকেই খাবার সংগ্রহ করে চারাগাছগুলি বেড়ে উঠতে পারবে। বন দফতরের আশা বীজ বোমা ব্যবহারের মাধ্যমে পাহাড়ের গায়ের রুক্ষ্ম ওই অংশ অচিরেই সবুজে ঢাকা পড়বে।
এ নিয়ে বন দফতরের ছাতনা রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জার এষা বসু বলেন, ‘‘শুধুমাত্র ওই অংশটুকু ছাড়া গোটা পাহাড় সবুজে ঢাকা। রুক্ষ্ম ওই অংশটুকুকেও সবুজে ঢেকে দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলক ভাবে বন দফতরের তরফে বর্ষাকাল জুড়ে দফায় দফায় ওই এলাকায় বীজ বোমা ফেলা হবে। আশা করি এই বোমার ব্যবহার সফল হবে। দ্রুত পাহাড়ের ওই অংশও সবুজে ঢাকা পড়বে।’’