বাঁকুড়ায় লোকালয়ে হাতির তাণ্ডব। — নিজস্ব চিত্র।
মকর সংক্রান্তির উৎসবের মাঝেই হাতির হানায় মর্মান্তিক মৃত্যু হল বৃদ্ধের। মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি থেকে বেরোতেই দু’টি হাতির সামনে পড়ে গেলে ওই বৃদ্ধকে পিষে দেয় একটি হাতি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার বড়জোড়া রেঞ্জের গোপবাঁদী গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম শম্ভূনাথ মন্ডল। বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে হাতির দল খাবারের খোঁজে বিষ্ণুপুর বনাঞ্চল হয়ে সটান হাজির হয় বেলিয়াতোড় এবং সংলগ্ন বড়জোড়া বনভূমিতে। দলে থাকা বেশির ভাগ হাতিকে বন দফতর জঙ্গলের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কড়া নজরদারির মধ্যে রাখলেও দু’টি হাতি বেশ কিছু দিন ধরে বিচ্ছিন্ন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে অরণ্য লাগোয়া গ্রামগুলিতে। স্থানীয়দের দাবি, খাবারের খোঁজে ওই হাতি দু’টি হাজির হয় বড়জোড়ার সাহারজোড়া জঙ্গল সংলগ্ন গোপবাঁদী গ্রামে। অন্যান্য দিনের মতো শুম্ভু ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বাইরে পা রাখতেই হাতি দুটির সামনে পড়ে যান। হতভম্ভ শম্ভু কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি হাতি প্রথমে তাঁকে শুঁড়ে তুলে মাটিতে আছাড় মারে। তার পর পায়ে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই শম্ভুর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার খবর জানার পর ঘটনাস্থলে হাজির হন বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়। বিধায়ককে কাছে পেয়ে বন দফতরের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ ক্ষোভ জানান। স্থানীয় গ্রামবাসীদের দাবি, অবিলম্বে এলাকা থেকে হাতি তাড়াতে হবে। বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, হাতি অরণ্য ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে এই ব্যাপারটি এতটা সরল না-ও হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অরণ্য কেটে লোকালয় তৈরি হয়েছে। ফলে হাতির বিচরণক্ষেত্রও কমছে প্রতি দিন। এই অবস্থায় প্রায়শই লোকালয়ে ঢুকে মানুষের উপর তাণ্ডব চালানোর ঘটনা ঘটাচ্ছে হাতি।
মৃতের ভাইপো সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘দুটি দাঁতাল হাতি বাড়ির দরজাতেই দাঁড়িয়েছিল। জেঠু তা বুঝতে পারেননি। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই হাতি দুটির সামনে পড়ে যান। হাতি ঘটনাস্থলেই তাঁকে পিষে মারে। এই ঘটনার সমস্ত দায় বন দফতরের। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি, বন দফতরকে এলাকা থেকে হাতি তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’’ বিধায়ক অলোক বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের ক্ষোভ খুব স্বাভাবিক। তিন মাস পরেও হাতি কেন এলাকা থেকে সরানো হচ্ছে না তা আমি বন দফতর ও পুলিশের কাছে জানতে চাইব। ক্ষতিপূরণের আবেদন জানাতে গিয়েও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের। আমি বিষয়টি প্রশাসনেরও নজরে এনেছি।’’ বন দফতরের বড়জোড়ার রেঞ্জার ঋত্বিক দে বলেন, ‘‘মৃতের পরিবারকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি এই ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জঙ্গলঘেরা গ্রামগুলিতে নজরদারি বৃদ্ধি করা হচ্ছে।’’