ময়ূরেশ্বরের রাজচন্দ্রপুরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে ভোটকর্মী। —নিজস্ব চিত্র।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ভোটকর্মীরা। চোখে, মুখে আতঙ্কের ছাপও স্পষ্ট। আতঙ্ক এমনই যে পরের বার ভোটের ডিউটি পড়লে যে কোনও ভাবে এড়িয়ে যেতে চান। এ ছবি ময়ূরেশ্বরের রাজচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪৭ নম্বর বুথের।
জেলা জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিয়ে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অন্যতম ময়ূরেশ্বর এই বুথটি। বিজেপির দাবি, ময়ূরেশ্বরে এই বুথে ছাপ্পা দিতে আসা বহিরাগত তৃণমূলের বাইক বাহিনীকে তাড়া করে হটিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এখানে দু’টি বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। পাশাপাশি, ব্যালট বাক্স পুকুরের জলে ফেলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। মাঝে পড়ে কার্যত অসহায় ভোটকর্মীরা।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বরের রাজচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথটি ছিল মহিলা পরিচালিত। সকাল সাতটাতেই ওই বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বুথে এক জন মাত্র পুলিশকর্মী ছিলেন। অভিযোগ, দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ারও রাখা হয়েছিল। প্রায় ২০০টি ভোট গ্রহণ হয়ে যাওয়ার পরে আচমকা ১০-১৫ জনের বাইকবাহিনী এসে হাজির হয় বলে স্থানীয়েরা জানান। তাঁদের মুখ কালো এবং সাদা কাপড় বাঁধা ছিল। অভিযোগ, বাইকবাহিনীর লোকেরা বুথে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে অবাধে ছাপ্পা দিতে শুরু করে।
ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যান ভোটকর্মীরা। কিন্তু খবর ছড়িয়ে পড়তেই এক দল লোক ছুটে আসেন। তাঁদের তাড়া খেয়ে দু’টি বাইক ফেলে বাইকবাহিনীর সদস্যের চম্পট দেন। অভিযোগ, বাইক দু’টিতে আগুন ধরিয়ে ব্যালট বাক্স জলে ফেলে দেওয়া হয়। ফলে, ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।
এই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন প্রিসাইডিং অফিসার অঙ্গনা শেঠ এবং ভোটকর্মী রাখী লাহার। তাঁদের চোখেমুখে তখনও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তাঁরা বলেন, ‘‘কী করে সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরব ভেবে পাচ্ছি না। পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায় ভোট করতে এসেছিলাম। কিন্তু কোথায় কী?আমরা মুখ খুললে কী হত বলা যায় না। এর পর ভোটের ডিউটি পড়লে যে ভাবেই হোক অব্যাহতি নেওয়ার চেষ্টা করব।’’
যদিও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নারায়ণ প্রসাদ বলেন, ‘‘আমাদের কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। ভোট বানচাল করতে বিজেপিই ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।’’ বিজেপির স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন,‘‘ তৃণমূলের বাইকবাহিনী ভোট লুঠ করতে এসেছিলেন। আমাদের লোকেরা রুখে দিয়েছে। ওরাই ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’’
এখানে কি আবার ভোট হবে? ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকের বিডি দীপাঞ্জন জানা বলেন,‘‘পরবর্তী সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নেবে।’’