প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ভিন্জেলায় পালিয়েও পুলিশকে ফাঁকি দিতে ব্যর্থ বোলপুরকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত হাতুড়ে ডাক্তার চন্দন ইসলাম। রবিবার মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থেকে তাঁকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। তার পরেই বোলপুরে শিশু-সহ একই পরিবারের তিন সদস্যকে পুড়িয়ে মারার ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিল পুলিশ।
স্বামী-স্ত্রী এবং তাঁদের চার বছরের শিশুসন্তানকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় সাংবাদিক বৈঠক করেন বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। তিনি বোলপুর থানার রজতপুরের নতুনগীত গ্রামের ওই ঘটনাকে ‘নৃশংস অপরাধ’ বলে মন্তব্য করেন। পুলিশ জানিয়েছে, পরিকল্পনামাফিক তোতা শেখ, তাঁর স্ত্রী রূপা বিবি এবং তাঁদের শিশুসন্তান আয়ান শেখকে হত্যা করেছেন বাড়িরই সেজো বৌ নাজনিম নাহাত ওরফে স্মৃতি এবং পাশের গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার শফিকুল ইসলাম ওরফে চন্দন। পরকীয়ায় বাধা থেকেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সেজো বৌ স্মৃতির স্বামী কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন। সেজো বৌয়ের সঙ্গে এলাকার হাতুড়ে ডাক্তার চন্দনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়। এ নিয়ে স্মৃতির শ্বশুরবাড়িতে অশান্তি হয়েছিল। পুলিশ জানাচ্ছে, স্মৃতির ভাসুর আব্দুল আলিম ওরফে তোতা এবং তাঁর স্ত্রী রূপা ওই পরকীয়ার সম্পর্ক নিয়ে ‘সবচেয়ে বেশি আপত্তি’ জানিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তাঁদের খুনের পরিকল্পনা করেন বাড়ির সেজো বৌ এবং তাঁর প্রেমিক।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর তুতার বাড়িতে যান ওই হাতুড়ে ডাক্তার। একটি বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে কথা বলার অছিলায় তাঁর উদ্দেশ্য ছিল স্মৃতিকে খুনের পরিকল্পনার কথা বলে দেওয়া। সে দিন রাতে দু’জনে মিলে আগুন ধরিয়ে খুনের চক্রান্ত করে ফেলেন। চন্দন আগেই একটি বোতলে ক্লোরোফর্ম ভরে স্মৃতিকে রাখতে দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি স্মৃতিকে জানান, ওই রাতেই ক্লোরোফর্ম কাজে লাগবে। বাকি জিনিসপত্র তিনি সঙ্গে করে আনবেন।
ওই কথা মতো সে দিন রাতে ক্লোরোফর্মের বোতল হাতে নিয়ে হাতুড়ে ডাক্তারের অপেক্ষায় বাড়ির বারান্দায় অপেক্ষা করছিলেন স্মৃতি। হাতুড়ে ডাক্তার চন্দন নিয়ে আসেন পেট্রোল, বালতি, স্টিক এবং আরও কিছু জিনিসপত্র। প্রথমে তোতার ঘরের একটি খোলা জানলা দিয়ে ক্লোরোফর্ম ছুড়ে দেওয়া হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, আগুন ধরানোর পরে যাতে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে না-পারেন, সে জন্য ওই ছক কষা হয়।
ক্লোরোফর্ম ছেটানোর পর বালতি থেকে পেট্রল নিয়ে জানলা দিয়ে ছোড়ার চেষ্টা করেন স্মৃতি। কিন্তু তাঁর উচ্চতা কম বলে জানলার ভিতর পর্যন্ত হাত পৌঁছোয়নি। তখন পেট্রলের বালতি নিজের হাতে নেন চন্দন। পেট্রলের কিছুটা চলকে গিয়ে হাতুড়ে ডাক্তারের নিজের গায়েও পড়েছিল। তাই আগুন ধরানোর সময় তাঁর শরীরের কিছুটা অংশ পুড়ে গিয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, চন্দন স্বীকার করে নিয়েছেন ষড়যন্ত্রের কথা। আর স্মৃতি আগেই নিজের দোষ কবুল করেছেন।
বোলপুরকাণ্ড নিয়ে জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘মৃতের পরিবারের এক সদস্য আকবর আলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তদন্তে নেমে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। ওই দু’জন ছাড়া আর কেউ খুনের ষড়যন্ত্রে যুক্ত কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। ধৃত চন্দনকে সোমবার আদালতে পাঠানো হবে। ঘটনার পুনঃনির্মাণের প্রয়োজনে দুই অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যেতে পারে পুলিশ।’’