বোলপুরের গ্রামে মা ও শিশুসন্তানের পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় নানা প্রশ্ন, ধোঁয়াশা
Rajatpur Death

‘চেনা’ লোকের হাত, দাবি বড় ছেলের

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের খাওয়াদাওয়া এক সঙ্গে সেরে আব্দুল আলিমের বড় ছেলে ওয়াসিম ওরফে রাজ পাশের ঘরে শুতে যায়।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ 

বোলপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৮:২২
Share:

বোলপুরে রজতপুরে নতুনগীত গ্রামে ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় শোকার্ত আব্দুল আলিমের বড় ছেলে ওয়াসিম আক্তার। ছবিঃ বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

কী ভাবে পুড়ে মৃত্যু হল মা ও শিশুপুত্রের? দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত চক্রান্ত? চক্রান্ত হলে কেন?

Advertisement

এই সব প্রশ্নই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে বোলপুরের রজতপুরের নতুনগীত গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম ওরফে তোতার পরিজনদের। খুন নাকি দুর্ঘটনা, সেটা এখনও পুলিশের কাছে পরিষ্কার নয়। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, খুনই করা হয়েছে আলিমের স্ত্রী কেরিমা ওরফে রূপা বিবি ও ছোট ছেলে আয়ানকে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেই মতো মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আজ, শনিবার ফরেন্সিক দল এসে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে। সেই রিপোর্ট এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতের খাওয়াদাওয়া এক সঙ্গে সেরে আব্দুল আলিমের বড় ছেলে ওয়াসিম ওরফে রাজ পাশের ঘরে শুতে যায়। আলিম স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে অন্য ঘরে শুয়ে পড়েন। এর পরেই কোনও এক সময় আগুন লাগে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘরের জানলা খোলা ছিল। কেরোসিন ও কিছু দাহ্য পদার্থ ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাতেই ঝলসে যায় একরত্তি আয়ান ও তার বাবা-মা। মৃত্যু হয় রূপা ও আয়ানের। বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আলিম।

Advertisement

গোটা গ্রাম শোকস্তব্ধ এমন ঘটনায়। এর আগে কখনও এই ধরনের কোনও ঘটনা এলাকায় ঘটেনি বলেই প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন। শুক্রবার সকাল থেকে গ্রামে এই ঘটনা নিয়েই আলোচনা। এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, আলিমের বাড়ির চারপাশে ভিড় করেছেন বহু মানুষ। বাড়ি ঘিরে রয়েছে পুলিশ। যে ঘরে আগুন লেগেছে, সেটির জানলার সামনে পড়েছিল লাঠিতে জড়ানো পোড়া কাপড়ের টুকরো, বাড়ির সামনে থাকা গাছও আগুনের তাপে ঝলসে গিয়েছে।গ্রামবাসী শেখ আব্দুল কাদের, শেখ হাবিবুর রহমানরা বলেন , “অত্যন্ত দুঃখের এবং মর্মান্তিক ঘটনা। বগটুইয়ের ঘটনার কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা চাই, দোষীরা চরম শাস্তি পাক।”

ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় আসেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ। সভাধিপতি বলেন, “এই পরিবারের পাশে আমরা সর্বতো ভাবে আছি। আমি চাই, এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক।” এই খুনের পিছনে ‘চেনা’ লোকের হাত রয়েছে বলে এ দিন দাবি করেছে আব্দুলের বড় ছেলে ওয়াসিম। কেন সে এ রকম মনে করছে, সে প্রশ্নে ওয়াসিমের দাবি, “হয়তো আমার বাবা কারও সম্পর্কে কিছু জেনে ফেলেছিল, যার জন্য তাকে মারার চক্রান্ত হয়েছে।”

পুলিশের এক কর্তা বলেন,“পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে এ দিন সন্ধ্যায় মা ও শিশুর দেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামে। সন্ধ্যাতেই সৎকার করে দেওয়া হয় দু’জনের দেহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement