Arts

Point Balancing Art: লকডাউনে জন্ম নিল বিন্দু ভারসাম্যের শিল্প, চোখ বেঁধে তাক লাগালেন কলেজ শিক্ষক প্রিয়দর্শী

প্রিয়দর্শী মজুমদারের কাছে এটাই এখন সময় কাটানো কিংবা শিল্পসৃজনের মাধ্যম। নাম বিন্দু ভারসাম্যের শিল্প বা পয়েন্ট ব্যালান্সিং আর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:০৬
Share:

প্রিয়দর্শীর ভারসাম্যের দুনিয়া

চোখ বেঁধেই কাপের উপরে কাপ সাজাচ্ছেন। তবে কিনা সোজাসুজি নয়, আঁকাবাঁকা। বরং খানিক অচিরাচরিত সজ্জারীতিতে। এক ঝলক দেখে সন্দেহ হতে পারে হাতে আঠা লাগানো নেই তো! প্রিয়দর্শী মজুমদারের কাছে এটাই এখন সময় কাটানো কিংবা শিল্পসৃজনের মাধ্যম। নাম, বিন্দু ভারসাম্যের শিল্প বা পয়েন্ট ব্যালান্সিং আর্ট। প্রিয়দর্শীর দাবি, পৃথিবীতে এই শিল্প সৃজন করছেন মুষ্টিমেয় কয়েকজন। তবে এ পর্যন্ত চোখ বেঁধে এমন ভারসাম্যের শিল্প সৃষ্টি করছেন সম্ভবত তিনি একাই।

Advertisement

লকডাউনে নেটমাধ্যমে তখন কেউ ছবি আঁকছেন, গান গাইছেন,ডালগোনা কফি বানাচ্ছেন। নিদেনপক্ষে বাসনমাজার ছবি দিয়ে নিজেকে ‘কাজের মেসো’দাবি করে ছবি ভিডিয়ো আপলোড করছেন— এ তখনকার কথা। বাড়িতে বসে একঘেয়েমির শিকার প্রিয়দর্শীর নজরে আসে ইজরায়েলের মহম্মদ আল শেনবারিকে ভারসাম্যের খেলা। মনে হল চেষ্টা করলে তিনিও কি পারেন না এমন শিল্পের স্রষ্টা হতে!

Advertisement

দমদম নাগেরবাজারের বাসিন্দা প্রিয়দর্শী ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ইলেকট্রনিক্সের শিক্ষক। কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি করে অধ্যাপনা শুরু। পাশাপাশি এখন তাঁর অবসরের সঙ্গী এই শিল্প।

কি এই ভারসাম্য শিল্প? ইটের বা পাথরের টুকরো অথবা কোনো কাচের বোতলের মুখে ছোট থেকে বড়, এক বা অনেক বস্তুকে নিখুঁতভাবে দাঁড় করিয়ে দেওয়াই এই শিল্পের লক্ষ্য। এ ভাবেই প্রিয়দর্শী তাঁর বাড়িতে তৈরি করেন একের পর এক বিমূর্ত ভাস্কর্য। তাঁর কথায়, ‘‘এই ভারসাম্য-ভিত্তিক ভাস্কর্যগুলি তৈরির মূল উদ্দেশ্য হল পৃথিবীর অভিকর্ষ বল বা গ্রাভিটিকে সুকৌশলে কাজে লাগানো।’’

বিজ্ঞানের সূত্র কাজে লাগিয়েই এই শিল্পের সৃষ্টি। তিনি ব্যালান্স করেন একাধিক চেয়ার, টেবিল, কাঠের আলমারি, গ্যাস-সিলিন্ডার, টিভি, সোফা। আবার কখনও চিনেমাটির কাপ, কাচের গ্লাস।

তাঁর এই শিল্প, সনাতন বলবিদ্যা বা ক্ল্যাসিকাল মেকানিক্সের সূত্রকেই প্রতিষ্ঠা করে। কারণ বলবিদ্যার সূত্র অনুযায়ী কোনও বস্তুতে বা বস্তুসমষ্টিতে যদি টর্ক কাজ না করে আর একটিমাত্র লম্বালম্বি বল নিচের দিকে কাজ করে তবে সেই বস্তু (বা সমষ্টি) একটি বিন্দুতে দাঁড়িয়ে থাকতেই পারে। ঘর্ষণ বলের সাহায্য নিয়ে সেই অতি ক্ষুদ্র জায়গায় ছোট থেকে বড় বিভিন্ন এক বা একাধিক বস্তুকে একসাথে দাঁড় করিয়ে রাখা তত্ত্বগত ভাবে অবশ্যই সম্ভব।

তবে তত্ত্বগত ভাবে এই ব্যালান্সিং সম্ভব হলেও বাস্তবে তা করে দেখানো বেশ কঠিন। প্রিয়দর্শীর দাবি, এই বিজ্ঞান-শিল্পটির পিছনে এমন কোনও যুক্তিভিত্তিক অ্যালগরিদম নেই যা শিখে নিয়ে যে কোনও মানুষই এই শিল্পে পারদর্শী হয়ে উঠতে পারেন। সেই কারণেই এটি বিমূর্ত শিল্প, সরাসরি কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নয়। এই শিল্পে লাগে একাগ্রতা ও ধৈর্য। জিনিসগুলি বিন্দুমাত্র সরে গেলেই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে সমগ্র গঠনটিই ভেঙে পড়বে।

প্রিয়দর্শী চোখ বন্ধ করেও বেশ কিছু ব্যালান্সিং করেছেন।

তাঁর মতে, ‘‘পয়েন্ট ব্যালান্সিং এর জগতে দৃষ্টিশক্তির থেকেও বেশি প্রয়োজন স্পর্শানুভূতি ও মনস্তাত্ত্বিক শক্তি।’’ তাঁর ইচ্ছে এই ভারসাম্য শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি সম্পর্কে অনুপ্রেরণামূলক বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নেওয়া। এখনও পর্যন্ত তিনি ১৪০টির মতো ভারসাম্য শিল্প (ব্যালান্সিং আর্ট) তৈরী করেছেন এবং ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে সর্বাধিক পয়েন্ট ব্যালান্সিং শিল্পী হিসাবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement