ইডির হাতে ধৃত প্রসন্ন রায়। —ফাইল চিত্র ।
নিয়োগ ‘দুর্নীতি’তে একাই ১০০ কোটি টাকা তুলেছিলেন প্রসন্ন রায়! শিক্ষা দফতরের আধিকারিক এবং অযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে তিনি সেতুবন্ধনও করতেন। এএসসি মামলার শুনানি চলাকালীন আদালতে তেমনটাই দাবি করল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি। প্রসন্ন এবং তাঁর পরিচিতদের ৯০টি সংস্থা রয়েছে বলেও আদালতে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সোমবার রাতে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রসন্ন। এই এসএসসি নিয়োগ ‘দুর্নীতি’তে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রসন্ন। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এর পর সোমবার ইডি তাঁকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার এসএসসি মামলায় প্রসন্নকে নগর দায়রা আদালতে হাজির করে ইডি। আদালতে ইডি দাবি করেছে, ধৃত প্রসন্ন শিক্ষা দফতরের আধিকারিক এবং অযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে সেতু হিসাবে কাজ করতেন। অযোগ্যপ্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়ে ভুয়ো নিয়োগপত্র দিতেন। প্রসন্নের বিরুদ্ধে ওএমআর শিট নিয়ে কারচুপির অভিযোগও তুলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
আদালতে ইডির অভিযোগ, নিয়োগ ‘দুর্নীতি’তে থেকে ১০০ কোটি টাকা তুলেছেন প্রসন্ন। কী ভাবে এই টাকা তাঁরা পেলেন তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলেও দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। ইডি জানিয়েছে, তদন্তের সময় তারা জানতে পেরেছে যে, মোট ২০৮১ জনকে অবৈধ ভাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ১১৩৫ জন নবম-দশমের প্রার্থী এবং ৯৪৬ জন একাদশ-দ্বাদশের প্রার্থী। অনেক চাকরিপ্রার্থীর উত্তরপত্র (ওএমআর শিট)-এ কারচুপি করা হয়েছে। এ ছাড়াও, ১৮৩ জন প্রার্থীকে প্যানেলের মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়ে যাওয়ার পর নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। ইডির দাবি, এই বেআইনি নিয়োগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন প্রসন্ন। ধৃত ব্যবসায়ীর অফিস থেকে ৩৯০টি দলিল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও ইডির আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন। ইডি আদালতে এ-ও দাবি করেছে, ২০১৬-২০২১ সালের মধ্যে বহু টাকার সম্পত্তি কিনেছেন প্রসন্নের পরিবারের সদস্যেরা। তাঁর সংস্থার নামেও সম্পত্তি কেনা হয়েছে। তবে সম্পত্তির দামেও কারচুপি করা হয়েছে বলে আদালতে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
প্রসন্নের ২০০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা জমা করা হয়েছে বলেও আদালতে জানিয়েছে ইডি। ইডির আইনজীবীর দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারী আধিকারিকদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি ধৃত। তাই প্রসন্নকে ১৪ দিনের জন্য ইডি হেফাজতে রেখে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা।
যদিও জামিনের আবেদন জানিয়ে প্রসন্নের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার দাবি, প্রসন্ন ব্যবসায়ী। বছরে ৮-১০ কোটি টাকা ট্যাক্স দিতেন। দেড় বছর সিবিআই হেফাজতে থাকার পর নভেম্বরে জামিন পেয়েছেন। প্রসন্নের কাছে কোনও টাকা পাওয়া যায়নি। শুধু কিছু নথি পাওয়া গিয়েছে। প্রসন্নের আইনজীবীর মন্তব্য, ইডি যে ১০০ কোটির দাবি করছে তার থেকেও দামি একটা মানুষের জীবন। তবে জামিনের আর্জি খারিজ করে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রসন্নকে ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রসন্নের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিংহের ‘ঘনিষ্ঠ’। এক জন ‘মিডলম্যান’। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল বলে জানা গিয়েছিল সিবিআই সূত্রে। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে বিজেপি নেতা তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের বাড়ির দলিলের ফোটোকপিও পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত দু’টি মামলার তদন্তে নেমে প্রসন্নের নাম পেয়েছিল সিবিআই। প্রসন্নকে এর পরে গ্রেফতার করে সিবিআই। তবে গ্রেফতার করা হলেও প্রসন্নের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়নি। চার্জশিট দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও তার প্রেক্ষিতে কোনও পদক্ষেপ না করায় বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন প্রসন্ন। বেশ কিছু শর্ত দিয়ে সিবিআইয়ের মামলায় তাঁকে জামিন দেয় শীর্ষ আদালত। এর পর সোমবার রাতে তাঁকে ইডি গ্রেফতার করে।