শুভেন্দু অধিকারী এবং আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংহ, এসএস (আইবি)। — নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালিতে শুভেন্দু অধিকারীদের বাধা দিতে আসা পাগড়িধারী আইপিএস অফিসারকে বিজেপি নেতৃত্ব ‘খলিস্তানি’ বলে আক্রমণ করেছেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার এই অভিযোগ ওঠার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ওই মন্তব্যের নিন্দা করে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে যাঁর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়কেরা সন্দেশখালি গিয়েছিলেন সেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, তিনি বা তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে কেউই এই ধরনের কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁর বক্তব্য, শিখদের প্রতি সম্মান রয়েছে তাঁর। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে শিখদের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু। যদিও তৃণমূলের একাংশের দাবি, বিষয়টি সংবেদনশীল বলে তড়িঘড়ি ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছেন বিরোধী দলনেতা।
মঙ্গলবার সকালে সন্দেশখালির উদ্দেশে রওনা হন বিরোধী দলনেতা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পাল-সহ বিজেপির এক প্রতিনিধি দল। তবে সন্দেশখালি প্রবেশের আগেই ধামাখালি এলাকায় ব্যারিকেড গড়ে শুভেন্দুদের আটকে দেয় পুলিশ। সেই সময়ই পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয় রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব এবং কর্মী-সমর্থকদের। অভিযোগ, সেই সময়ই ওই জায়গায় কর্তব্যরত পাগড়িধারী আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংহ, এসএস (আইবি)-র উদ্দেশে ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য উড়ে আসে বিজেপি নেতৃত্বের তরফ থেকে। অভিযোগ, সেই মন্তব্য করেছেন অগ্নিমিত্রা। তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা যায় যশপ্রীতকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বিষয়টির নিন্দা করে এক্স হ্যান্ডলে যে ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন, সেখানে দেখা গিয়েছে, বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রাকে ওই আইপিএস আধিকারিক বলছেন, ‘‘আমি পাগড়ি পরেছি বলে আমি খলিস্তানি! আপনি আমার ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? আমি এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব।’’ যদিও সেই ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। পরে অগ্নিমিত্রা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি ওই পুলিশ অফিসারকে খলিস্তানি বলিনি।’’
বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ওঠা এই মন্তব্যের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। যদিও সন্দেশখালি থেকে ফেরার পথে শুভেন্দুর দাবি, তিনি এই ধরনের মন্তব্য করেননি। তাঁর সঙ্গীরাও এই ধরনের কোনও মন্তব্য করেননি। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘পাকিস্তানি-খলিস্তানি এ সব বলার দরকার নেই আমাদের। ওই অফিসার রূঢ় ব্যবহার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজের নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমি বা আমাদের সঙ্গীরা কোনও ধর্মকে আক্রমণ করে কিছু বলিনি। বলবও না। আমরা গুরু নানকজিকে প্রণাম করি। শিখ ধর্মকে সম্মান করি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে শিখদের।’’ তবে শুভেন্দু এ-ও বলেছেন, ‘‘দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। আমরা রাষ্ট্রবাদে বিশ্বাসী। সমস্ত বিচ্ছিন্নতাবাদীর বিরোধিতা করি।’’
যদিও শুভেন্দুর দাবি মানতে রাজি নয় রাজ্যের শাসকদল। বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ এনে তৃণমূলের নেত্রী সুস্মিতা দেব বলেন, ‘‘বিজেপি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। তারা শুধু বিভেদ সৃষ্টি করে। ওই শিখ অফিসারকে খলিস্তানি বলে বিজেপি প্রতিনিধিদল তা আবার প্রমাণ করেছে। এটা সকলের কাছে খুব লজ্জার। বাংলার জন্য খুব লজ্জার। এ জন্য বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার উচিত ক্ষমা চাওয়া।’’
রাজ্যের বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘শাসকদল পুরো বিষয়টিকে ভুল ভাবে উপস্থাপিত করছে।’’