মেদিনীপুর শহরে বন্ধের সমর্থনে মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
বন্ধ সমর্থনকারীদের সরাতে গিয়ে মেদিনীপুর শহরে মার খেল পুলিশ। আরজি কর ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছিল এসইউসিআই। মেদিনীপুর শহরের কালেক্টরেট মোড়ে বাস আটকে ধর্মঘট পালন করছিলেন এসইউসিআইয়ের কয়েক জন সমর্থক। সে সময় মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার টাউন অফিসার প্রশান্ত কীর্তনিয়া ঘটনাস্থলে যান। ধর্মঘটীদের সরাতে গেলে বচসা শুরু হয়ে যায় পুলিশের সঙ্গে। তার পরেই ওই পুলিশ আধিকারিককে মারধর করা হয়। ওই খবর পেয়ে পুলিশবাহিনী যায়। তার পর বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই আধিকারিকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে হয়েছে।
মেদিনীপুর কলেজের সামনে সকাল থেকেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে স্লোগান দিতে থাকেন এসইউসিআই সমর্থকেরা। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন কলেজে ঢুকতে চান। তখন তাঁদের সঙ্গে বচসা শুরু হয়ে যায় বন্ধ বিরোধিতাকারীদের। ওই ঘটনায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চার জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘সরকার বন্ধ-বিরোধী। তাই কলেজে যে সকল সাধারণ পড়ুয়া ঢুকতে যাচ্ছিলেন, তাঁদের সাহায্য করতে গেলে এসইউসিআই সমর্থকেরা মারধর করেন। আমাদের চার জন আহত হয়েছেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক এবং ঘটনাটি বেদনাদায়ক। সেখানে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে অশান্ত করার চেষ্টা চলছে।’’
যদিও মেদিনীপুর শহরে বন্ধের প্রভাব তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। স্কুল-কলেজ, অফিস, বাজার-দোকানও স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায় নামে সরকারি এবং বেসরকারি বাস। তবে এসইউসিআই জেলা সম্পাদক নারায়ণ অধিকারী বলেন, ‘‘আরজি করের ঘটনা ন্যক্কারজনক। তার প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন চলছিল। আমাদের দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় ১২ ঘণ্টা বাংলা বন্ধের। স্বাভাবিক ভাবে চলছিল বাংলা বন্ধ, তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী, বিশাল পুলিশবাহিনী এসে আক্রমণ করে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মেদিনীপুর কলেজ গেটে আমাদের সমর্থক, মহিলা এবং ছাত্রদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। কালেক্টরেট মোড়েও পুলিশবাহিনী আমাদের উপর চড়াও হয়। আমাদের কর্মীদের মারধর করে। দু’জন ছাত্রী-সহ ১২ জনের বেশি গ্রেফতার হয়েছেন। সঠিক সংখ্যা এখনও বুঝতে পারছি না। তবে এই আন্দোলন এখানে থেমে থাকবে না।’’
বাঁকুড়ায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে যুবতী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং মৃত্যুতে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারি এবং কঠোর শাস্তির দাবির পাশাপাশি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে এসইউসিআইয়ের বন্ধে বাঁকুড়া জেলায় আংশিক প্রভাব পড়ে। যান চলাচল তুলনামূলক ভাবে কম ছিল। বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে অধিকাংশ বেসরকারি বাস বিভিন্ন রুটে বার হয় স্বাভাবিক ভাবে। তবে জঙ্গলমহলের একাধিক রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বেশ কিছু দোকান বন্ধ দেখা গিয়েছে।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বাংলা স্তব্ধ করার ডাক দেওয়া হয় বিজেপির পক্ষ থেকেও। ওই কর্মসূচির জন্য পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ায় বিজেপি। পদ্মশিবিরের নেতা এবং কর্মীদের জিটি রোড থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। যদিও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ হয়। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং সার্ভিস রোড অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানা এলাকার মুচিপাড়া মোড়ের কাছেও। বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ দে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
হুগলির ব্যান্ডেল চৌমাথা জিটি রোড অবরোধ বিজেপির। পুলিশ অবরোধ তোলার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি হয় সেখানেও। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে শিলিগুড়িতে কর্মসূচি পালন করে বিজেপি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ।
অন্য দিকে, আরজি কর-কাণ্ডে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ পুলিশকে বয়কট করার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আজ পুলিশকে বয়কট করার সময় এসেছে। পুলিশও আমাদের সমাজের লোক। তাদের আমরা আক্রমণ করতে চাই না। কিন্তু, যারা এই স্বৈরাচারী সরকারকে বাঁচাচ্ছে, ধর্ষণকারীকে বাঁচাচ্ছে, তাদের বয়কট করুন। আমি ডাক্তারদের বলছি, ওই পুলিশ এবং তার পরিবারকে চিকিৎসা থেকেও বয়কট করুন। তাঁদের কোনও পরিষেবা দেবেন না। কারণ, এঁরা অত্যাচারী এবং ধর্ষকদের সঙ্গে আছে।’’