লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিতেও মোদীকে চায় রাজ্য বিজেপি। — ফাইল চিত্র।
হাতে রয়েছে একটা বছর। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক আগে শুরু করলেও, এ বার লড়াইয়ের ময়দানে নামবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নির্বাচন ঘোষণার পরে বিজেপির প্রধান মুখ প্রচারে তো নামবেনই, তবে তার আগে দেশের সব রাজ্যেই ভোট প্রস্তুতির সভাও করবেন। এমনটাই সিদ্ধান্ত বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। এই রাজ্যে এমন পাঁচটি সভা হতে পারে।
তবে মোদী অতটা সময় বার করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে রাজ্য বিজেপি নেতাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। তবে এই প্রসঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এই পরিকল্পনার গোটাটাই করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিল্লি থেকেই সবটা ঠিক হবে। ফলে আমাদের তো চিন্তা করার কিছু নেই। নির্দেশ পালন করাই আমাদের কাজ। তবে মোদীজিকে বেশি করে পাওয়া তো সৌভাগ্যের। আমরা চাই, আরও বেশি বেশি সভা হোক ওঁর।’’
২০১৪ সালে প্রথম বার মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গড়েছিল ২৮২ আসন পেয়ে। ২০১৯-এ বিজেপির আসনসংখ্যা বেড়ে হয় ৩০৩। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই শক্তি আরও বাড়ানোই লক্ষ্য পদ্মশিবিরের। দল মনে করছে, মোট আসনসংখ্যা বাড়াতে হলে, অতীতে জেতার মতো পরিস্থিতি থাকলেও জয় আসেনি এমন লোকসভা আসনগুলির দিকে বাড়তি নজর দেওয়া দরকার। সে কারণেই গত জুন মাসে দেশের ১৪৪টি হেরে যাওয়া আসনকে বিশেষ নজরে আনা হয়। পরে অবশ্য সেই আসনসংখ্যা আরও বাড়িয়ে করা হয় ১৬০।
গ্রাফিক:শৌভিক দেবনাথ।
বিজেপি পরিকল্পনা মতো প্রথম থেকেই চারটি করে আসন নিয়ে এক একটি ‘ক্লাস্টার’ তৈরি করেছে। প্রতিটি ক্লাস্টারের জন্য এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের এক নেতাকে দায়িত্ব দেয়। কর্মসূচির নাম ছিল— ‘লোকসভা প্রবাস যোজনা’। মন্ত্রীরা সব আসন ঘুরে রিপোর্টও জমা দিয়েছিলেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচন প্রস্তুতির ছক সাজাচ্ছে বিজেপি। এ বার ঠিক হয়েছে সব ক’টি ক্লাস্টারে মোদী একটি করে সভা করবেন। আর ক্লাস্টারের মধ্যে থাকা দু’টি করে আসন নিয়ে আলাদা করে সভা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা।
পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। ২০২৪ সালের ভোটে আসন বাড়ানোর জন্য বিজেপি তিনটি রাজ্যে বিশেষ নজর দিচ্ছে। এর মধ্যে বাংলা ছাড়াও রয়েছে ওড়িশা ও তেলেঙ্গানা। গত লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে বিজেপি ১৮টি আসনে জয় পেয়েছিল। তার মধ্যে থেকে আসানসোল এখন তৃণমূলের হাতে। অন্য দিকে, ব্যারাকপুর বিজেপির হলেও সাংসদ অর্জুন সিংহ তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। তবে বিজেপি ২০১৯ সালে জেতা এই দুই আসনকে এই হিসাবের মধ্যে রাখেনি। রাজ্যে মোট লোকসভা আসন ৪২। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হারা আসন ২৪টি। এর মধ্যে ১৯টিকে রাখা হয়েছে এই কর্মসূচির মধ্যে। কঠিন আসন হিসাবে বাদ দেওয়া হয়েছে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট এবং বারাসত। এ ছাড়াও তৃণমূল সাংসদ তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পিতা শিশির অধিকারীর কাঁথি আসনকেও বাদ রাখা হয়েছে। এই বাদ রাখার পিছনে বিজেপির কোনও ঘোষিত কারণ নেই। তবে এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘ওই লোকসভাটা আমাদেরই। গত বিধানসভা নির্বাচনে ওই আসনের অন্তর্গত পাঁচটি আসনেই আমরা জয় পেয়েছি।’’
গোটা দেশের হিসাবে বিজেপি যে ক্লাস্টার বিভাজন করেছে, তাতে বাংলার পাঁচটির ক্রমিক সংখ্যা ৩৬ থেকে ৪০। এর মধ্যে ৩৯ নম্বর ক্লাস্টারে রয়েছে তিনটি লোকসভা আসন। বাকিগুলিতে চারটি করে। মালদহ দক্ষিণ, কৃষ্ণনগর, আসানসোল, বোলপুরকে নিয়ে ক্লাস্টারের দায়িত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বীরেন্দ্র কুমার। বীরভূম, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবারকে নিয়ে ক্লাস্টার ৩৭-এর দায়িত্ব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের দায়িত্বে ক্লাস্টার ৩৮। এর মধ্যে রয়েছে, দমদম, যাদবপুর, কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ আসন। হাওড়া, উলুবেড়িয়া এবং শ্রীরামপুর আসন নিয়ে ক্লাস্টার ৩৯-এর দায়িত্বে মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। সর্বশেষ ক্লাস্টার ৪০-এর মধ্যে রয়েছে আরামবাগ, তমলুক, ঘাটাল এবং বর্ধমান পূর্ব। এই ক্লাস্টারের দায়িত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী। প্রতিটি ক্লাস্টারের দায়িত্বের রাজ্যেরও একজন করে নেতা রয়েছেন। আবার প্রতিটি লোকসভা আসন ধরেও দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে। সেই সঙ্গে ১৯ লোকসভা আসনের জন্য এখন থেকেই বিস্তারক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। তার প্রস্তুতিও চলছে।
বিজেপির যা পরিকল্পনা, তাতে চলতি বছরে প্রতিটি ক্লাস্টারের জন্য একটি করে সভা করতে বাংলায় আসবেন মোদী। তবে কোনটি কবে হবে তা এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়নি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সুবিধা মতো সময় দেবেন বলে জানা গিয়েছে। যে ক্লাস্টার অনেক দূরের আসন নিয়ে তৈরি হয়েছে, সেখানে সভার সময় কিছু কিছু বদল আনা হতে পারে। আশপাশের আসন নিয়ে ক্লাস্টারে রদবদলের পরিকল্পনাও করে রেখেছে রাজ্য বিজেপি। তবে কবে মোদী সময় দেবেন এবং আসবেন সে দিকে পথ চেয়ে রয়েছে দল। তবে খুব তাড়াতাড়ি শাহ এবং নড্ডার সভা শুরু হয়ে যেতে পারে। আগামী ১৯ জানুয়ারি আসছেন নড্ডা। সভা হতে পারে কৃষ্ণনগর এবং আরামবাগে। দু’টি আসনই বিজেপির জয়ের লক্ষ্য তালিকায় রয়েছে। এর পরে শাহ কবে কোথায় আসবেন তা জানা না গেলেও বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। চলতি মাসেই শাহ সভা করতে পারেন বীরভূম জেলায়।