‘শুধু একটি ‘ত’-এর জন্য হয়তো দেশছাড়া হতে হবে’

ময়নাগুড়ির ভোটপট্টির বাসিন্দা লুতফা বেগম জানালেন, তাঁর ভোটার কার্ডে বানান লেখা রয়েছে ‘লুতফা’ কিন্তু আধার কার্ডে সেটাই হয়ে গিয়েছে ‘লুৎফা।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৯
Share:

ভোগান্তি: আধার কার্ডের কাজে টোকেন নেওয়ার অপেক্ষা। নিজস্ব চিত্র

নামের বানানে ‘ৎ’ ছাপা হয়েছে, কিন্তু হবে ‘ত।’ বানান ঠিক করতে বাড়ি থেকে বেরতে হয়েছে ভোর পাঁচটায়। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উজিয়ে লুতফা যখন জলপাইগুড়ি শহরে প্রধান ডাকঘরে পৌঁছলেন তখন ঘড়িতে সাতটা বাজে। কিন্তু ততক্ষণে তৈরি হয়ে গিয়েছে প্রায় আড়াইশো জনের লাইন।

Advertisement

ময়নাগুড়ির ভোটপট্টির বাসিন্দা লুতফা বেগম জানালেন, তাঁর ভোটার কার্ডে বানান লেখা রয়েছে ‘লুতফা’ কিন্তু আধার কার্ডে সেটাই হয়ে গিয়েছে ‘লুৎফা। আধারের বানান সংশোধন করতে শীতের ভোরে বাড়ি থেকে বেরতে হয়েছে তাঁকে। এত তাড়াহুড়োর কী রয়েছে? কৃষক পরিবারের সদস্য লুতফার উত্তর, ‘‘এতদিন তো এমনই ছিল, চিন্তা করিনি। এখন দিনকাল ভাল না। হয়তো ওই ‘ৎ’-এর জন্য দেশছাড়া হতে হবে। আবার কী সব ক্যাম্পও আছে শুনছি।’’ এমনই নানা ভয় নিয়ে জেলার নানা জায়গা থেকে আসা বাসিন্দারা ভোর থেকে লাইন দিয়েছেন জলপাইগুড়ির প্রধান ডাকঘরে। কেউ এসেছেন সংশোধন করাতে, কেউ বা নতুন আধার কার্ড করাতে।

সোমবার প্রধান ডাকঘরের লাইন উপচে বেরিয়ে এসেছিল রাস্তায়। ডাকঘর সূত্রের খবর, এ দিন প্রায় হাজার মানুষ লাইন দিয়েছিলেন। সোমবার করে ডাকঘরে নতুন কার্ড বানানোর বা সংশোধন করার জন্য টোকেন দেওয়া হয়। আগের রাত থেকে অপেক্ষা করে সকেল টোকেন নেন। টোকেনের সঙ্গে একটি তারিখ দেওয়া হয়। সেই তারিখে এসে

Advertisement

কার্ডের কাজ করতে হয়। এ দিন পাঁচশো জনকে টোকেন দেওয়া হয়েছে। বাকিদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতেই। মাথাভাঙার ইচ্ছাগঞ্জ থেকে জলপাইগুড়িতে নাতির আধার কার্ড বানাতে এসেছিলেন মুকুন্দ বর্মণ। জমিতে ধানের পরে আলু লাগিয়েছেন তিনি। এখন খেতে লাইন করতে হবে, কীটনাশক ছেটাতে হবে।

ষাট ছোঁয়া মুকুন্দের কথায়, “জমির কাজ মাথায় উঠেছে। পেটের কথা এখন ভাবছি না। নাতির কোনও কার্ড নাই। এনআরসিতে যদি নাম বাদ দেয়।” প্রথমে তিনি কোচবিহারে গিয়েছিলেন সেখানে লাইন দিয়ে হয়নি। কারও কাছে শুনেছেন জলপাইগুড়িতে হচ্ছে, প্রথমে একদিন এসে খোঁজ নিয়ে গিয়েছেন। তারপর রবিবার রাতে পৌঁছে লাইন দিয়েছেন।

এ দিন যথাযথ তথ্য না জানানোর অভিযোগও উঠেছে পোস্ট অফিসের কর্মীদের বিরুদ্ধে। জল্পেশের বাসিন্দা ১৯ বছরের রুবি বেগম নতুন কার্ড করাতে এসেছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছে জন্মের শংসাপত্র না থাকলে কার্ড হবে না। অথচ নিয়ম অনুযায়ী জন্মের শংসাপত্রের বিকল্প হিসেবে আরও তিনটি প্রমাণের কথা বলা হয়েছে। কার্ড হবে না শুনে পোস্ট অফিসের সিঁড়িতে বসেই কাঁদছিলেন রুবি। তাঁকে কয়েকজন সান্ত্বনা দিলেন। সঙ্গে থাকা লুনা খাতুনের কথায়, “যে দেশে জন্মালাম। যে দেশের নেতাদের ভোট দিয়ে জেতালাম। তাঁরাই এখন আমাদের তাড়িয়ে দিতে চাইছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement