বালুরঘাট লোকসভার বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। ফাইল চিত্র।
পিচের চাদর উঠে গিয়ে পাথরের টুকরো বেরিয়ে পড়েছে। গর্তে ভরা গ্রামের একমাত্র পাকা রাস্তার শুরু থেকেই অনুন্নয়নের ছবি স্পষ্ট করে দেয়। জেলা সদর বালুরঘাটের অদূরে ভাটপাড়া পঞ্চায়েতে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা ওই গ্রামটির নাম চকরামপ্রসাদ। যেন কিছুই নেই গ্রামে। প্রায় বছর দুয়েক আগে তফসিলি ও আদিবাসী-প্রধান এই গ্রামটি ‘দত্তক’ নেন বালুরঘাট লোকসভার বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। এই গরমে সেই গ্রামেরই মানুষ তীব্র জল-সঙ্কটে ভুগছেন বলে অভিযোগ।
ওই গ্রামের এক বধূ ঝর্না দেবনাথ বলেন, ‘‘বাড়িতে জলের পাইপ টেনে এক বছর আগে ট্যাপ বসেছে। বাড়িতে জল আসে না।’’ পঞ্চায়েত থেকে বসানো এলাকার পাঁচটি হস্তচালিত পানীয় জলের কল দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। গায়েব হয়ে গিয়েছে একাধিক নলকূপের মাথা, জানান আরও কয়েকজন মহিলা।
বেহাল রাস্তার ধারে বটতলায় বসানো পিএইচই-র ট্যাপ থেকে সরু সুতোর মতো জল পড়ে। সত্তরোর্ধ্ব গ্রামের প্রবীণ অরুণ প্রামাণিকের আক্ষেপ, ‘‘বাড়ির নলকূপ খারাপ। পাইপলাইনের ট্যাপে জল নেই। রাস্তার ধারে ওই সুতোর ধারায় কল থেকে এক বালতি জল ভরতে অনেক সময় লাগে। তার পরেও মেলে ঘোলা জল!’’
অথচ, দত্তক নেওয়ার সময় সাংসদ সুকান্ত গ্রামে পানীয় জল, রাস্তা, পথবাতি, ঠান্ডা জলের মেশিন, কমিউনিটি হলঘর তৈরি-সহ সার্বিক উন্নয়নের একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে জানান বাসিন্দারা। গত বছর সৌর পথবাতি বসলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েকটি অকেজো হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, আর কিছু কাজ হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। এখন ‘দত্তক’ থেকে মুক্ত হতে চান বলেও মন্তব্য করেন কয়েকজন।
বুধবার অবশ্য সাংসদ সুকান্ত দাবি করেন, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ আজ, বৃহস্পতিবার গ্রামটিতে যাবেন বলেও তিনি জানান। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকারের অভিযোগ, ‘‘দত্তক নিলেই হয় না। মানুষের জন্য কাজ করতে হয়।’’ বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ কী করেছেন তা ওই গ্রামের মানুষও টের পাচ্ছেন বলে মৃণালের কটাক্ষ।
চকরামপ্রসাদ গ্রামের বিজেপির বুথ সভাপতি অজয় দেবনাথের অভিযোগ, ‘‘সাংসদ দত্তক নেওয়ায় শাসকদল কোনও কাজ করছে না। প্রশাসনকেও কাজ করতে দিচ্ছে না।’’ তৃণমূলের বুথ সভাপতি পুলক দেবনাথ ওই অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘খরা মরসুমে জলস্তর নেমে যাওয়ায় বাড়িতে জল পৌঁছচ্ছে না। পিএইচই-কে জানানো হয়েছে।’’ পিএইচই-র জেলা নির্বাহী বাস্তুকার সুব্রত কর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।