উদয়ন গুহের মন্তব্যে বিতর্ক। — ফাইল চিত্র।
গাজোয়ারি করে পঞ্চায়েত ভোটে জেতা যাবে না। দলীয় কর্মীদের বার বার এই ভাষাতেই সতর্ক করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই হুঁশিয়ারিকে উড়িয়ে দিয়েই দিনহাটায় ‘বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত’ গড়ার ডাক দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। রবিবার দিনহাটার পাঁচমাথার মোড়ে একটি পথসভায় উদয়ন কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, ২০১৮ সালের মতো এ বারও পঞ্চায়েত নির্বাচনে দিনহাটা ‘বিরোধীশূন্য’ করার। উদয়নের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধীরা।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। সেই ‘গাজোয়ারি’র আঁচ যে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে পড়েছিল, তা পরবর্তী কালে উঠে আসে তৃণমূলের ভোট বিশ্লেষণে। ২০২৩ সালে আবার পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের মুখোমুখি রাজ্যের শাসকদল। তাই এ বারও যাতে ২০১৮ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিয়ে বহু আগে থেকেই সতর্ক তৃণমূল শিবির। এই আবহে পঞ্চায়েত ভোটে গাজোয়ারি না করার বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। কিন্তু রবিবার উল্টো সুর শোনা গেল রাজ্যের মন্ত্রী উদয়নের কণ্ঠে। রবিবার দিনহাটা শহর ব্লক তৃণমূলের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল পথসভার। সেখানে প্রধান বক্তা ছিলেন উদয়ন। তিনি বলেন, ‘‘দিনহাটা দু’নম্বর ব্লকে সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেস নিল (শূন্য)। এ বারও জোট হোক বা না হোক এ বারও নিল নিল নিল। চার দিকে নিল নিল নিল ছাড়া যেন আর কিছু না থাকে। সে ভাবে গ্রামের কর্মীরা তৈরি হবেন। আমাদের শহরের কর্মীরা পাশে গিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। ভোট ঘোষণা হলে শহরের কোনও নেতা আর শহরে থাকতে পারবেন না। তাঁরা গ্রামে গিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে, প্রয়োজনে রাতে আপনাদের বাড়িতে থেকে, এলাকায় এলাকায় মানুষের কাছে গিয়ে পাশে গিয়ে আসল কথাগুলি তুলে ধরবেন। কোথায় চক্রান্ত, কোথায় হেনস্থা করা হচ্ছে এই কথাগুলি মানুষের কাছে তুলে ধরবেন।’’
উদয়নের ‘শূন্য’ তত্ত্বের কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি। গেরুয়াশিবিরের কোচবিহার জেলার সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘২০২৪ সালের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে তাঁরা ভেবেছিলেন পঞ্চায়েত নির্বাচনটা ভাল ভাবে করবেন। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে নিচুতলার কর্মীরা উদয়নবাবুরা ভাবছেন, জোর করে কিছু না নিলে আর পারা যাবে না। এই কায়দাতেই এত দিন তাঁরা বলে এসেছেন মানুষ ভোট দেবে। আমরা বিরোধীদের প্রার্থী বাছাই করে দেব। আর এখন তাঁদের বলতে হচ্ছে, সব কিছু নিল (শূন্য) করে দিতে হবে। দিনহাটার উপনির্বাচনে যে ভাবে বিরোধীশূন্য করে উদয়নবাবু জিতেছেন সেই কায়দা তিনি ফলাতে চাইছেন। তাতে হিতে বিপরীত হবে। তৃণমূলের নেতারাও শান্তিতে থাকতে পারবেন না। গত বারের কায়দায় যদি আক্রমণ হয়, তা হলে পাল্টা আক্রমণ করতে পিছপা হবে না বিজেপি।’’