Abdul Karim Chowdhury

আমি বিদ্রোহী, নির্দল হয়েই লড়ব, হুঁশিয়ারি ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক করিম চৌধুরীর

বুধবার রাতে ইসলামপুর থানার দক্ষিণ মাটিকুণ্ডা গ্রামে শাকিব আখতার (৩০) নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনা ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও ইসলামপুর শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৭
Share:

হুঁশিয়ারি আব্দুল করিম চৌধুরীর। — ফাইল চিত্র।

জেলা সভাপতি এবং ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে ২ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়বেন নির্দল হয়ে। বৃহস্পতিবার এমন হুঁশিয়ারিই দিলেন উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর বিধানসভার বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। নিজেকে ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক হিসাবেও আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। দলের এক জন বিধায়ক হয়ে আব্দুল করিমের এ হেন মন্তব্য ‘অপ্রত্যাশিত’ বলেই মনে করছে তৃণমূল।

Advertisement

বিতর্কের সূত্রপাত, বুধবার রাতে ইসলামপুর থানার দক্ষিণ মাটিকুণ্ডা গ্রামে শাকিব আখতার (৩০) নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ ঘিরে। নিহত শাকিবের দাদা শাহনওয়াজ আলম স্থানীয় তৃণমূল নেতা। তিনি আব্দুল করিমের গোষ্ঠীর লোক হিসাবেই পরিচিত। বুধবার রাতে তাঁর বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের দখলে থাকা মাটিকুণ্ডা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মেহবুব আলমের নেতৃত্বে। তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলার সভাপতি কানহাইয়ালাল আগরওয়াল এবং তৃণমূলের ইসলামপুর ব্লকের সভাপতি জাকির হোসেনের গোষ্ঠীর লোক হিসাবে পরিচিত এই মেহবুব। এই নিয়েই কানহাইয়ালাল এবং জাকিরকে বিঁধেছেন আব্দুল করিম। এই সূত্রেই আব্দুল করিমের ‘চ্যালেঞ্জ’। বুধবার রাতে শকিবকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকরা। হাসপাতালে পৌঁছে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন আব্দুল করিম। কানহাইয়ালাল এবং জাকিরকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের সংগ্রামী নেত্রী আমাকে ভালবাসেন। তাঁকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে এরাই। আমি ক্ষমা করব না। বিধানসভায় আমাকে হারানোর চেষ্টা করেছিল। করিম চৌধুরীকে দমাতে হবে এই সন্ত্রাসবাদী নেতাদের হাত দিয়ে? সংগঠনের সভাপতিকে রাখার জন্য আমাকে ইস্তফা দিতে বলা হচ্ছে। ঠিক আছে, যদি এই ক্ষেত্রে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তা হলে আমি ইস্তফা দিয়ে দেব।’’

আব্দুল করিমের অভিযোগ, ‘‘জেলা সভাপতি কানহাইয়া আগরওয়াল নিজের লোক জাকির হোসেনকে ব্লক সভাপতি রেখেছে সন্ত্রাস করার জন্য। খুনখারাপি করছে। আইসি কিছু করতে পারছে না। প্রশাসন বলছে, আপনারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করবেন আমরা কী ব্যবস্থা নেব?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মমতা’দি চুপচাপ বসে আছেন কেন? এটা করিম চৌধুরীর এলাকা বলে? আপনি আমাকে শেষ করে দিন। আমার কোনও কথা শুনতেই চান না আপনি। আমার ভাল লাগছে না মমতা’দি। এটা ডাইরেক্ট (সরাসরি) আপনাকে বলছি প্রেসের (সংবাদমাধ্যম) মাধ্যমে। এটা বন্ধ করুন। এটা ঠিক নয়। সারা পশ্চিমবাংলায় আপনার দলের বিরুদ্ধে ঘৃণা চলে আসবে। আপনি সন্ত্রাসবাদী লোকগুলিকে রেখেছেন। প্লিজ় স্টপ ইট। আমি আপনাকে বলছি মমতা’দি। আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।’’ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ক্ষিপ্ত আব্দুল করিমের মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছি, আপনি যদি ২ দিনের মধ্যে কানহাইয়ালাল আগরওয়াল এবং জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেন তা হলে আমি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেব। আবার লড়ব আমি নির্দল প্রার্থী হিসাবে। চ্যালেঞ্জ থাকল আমার।’’

Advertisement

আব্দুল করিমের এমন বক্তব্য নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘দলের এক জন নেতার মুখে এই ধরনের মন্তব্য অপ্রত্যাশিত। দল বিষয়টির উপরে নজর রাখছে।’’ বৃহস্পতিবার শাকিবের হত্যার প্রতিবাদে ইসলামপুরে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন আব্দুল করিমের অনুগামীরা। তাঁরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ দেখান তাঁরা। ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরে চলে অবরোধ। তার পর পুলিশি আশ্বাসে তা উঠে যায়। এর পর অনুগামীদের নিয়ে ইসলামপুর থানা ঘেরাও করেন করিম চৌধুরী।

ইসলামপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতির সঙ্গে আব্দুল করিমের বিরোধ নতুন নয়। গত বছরের অগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে জাকির ব্লক সভাপতি হওয়ার পর একই সুরে ফুঁসে উঠেছিলেন ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক। জাকির ‘দুষ্কৃতী’ বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এমনকি সেই সময় তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘মমতাদিকে বলছি, আপনি প্লিজ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। না হলে ইসলামপুরে আন্দোলন চলবে।’’ ওই ঘটনার বছর খানেক আগে অর্থাৎ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে এই আব্দুল করিমকেই প্রশাসনিক বৈঠকে ধমক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রায়গঞ্জে হওয়া ওই প্রশাসনিক বৈঠকে পৃথক জেলা চেয়ে বসেছিলেন ইসলামপুরের বিধায়ক। সেই সময় আব্দুল করিমকে ধমক দিয়েছিলেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement