মৃত সুতপা চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
বহরমপুরের গোরাবাজারের ২৬/৮ শহিদ সূর্য সেন রোড— যা লোকমুখে স্যুইমিং পুলের গলি নামে পরিচিত। সেটি বহরমপুর শহরের অভিজাত এবং জনবহুল এলাকাও বটে। সেখানে একটি মেস বাড়িতে থাকতেন বহরমপুর গার্লস কলেজের প্রাণিবিদ্যার তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুতপা চৌধুরী। সেখান থেকে খানিটা দূরে শহরের জনপ্রিয় ‘মোহনের মোড়’। সেই মোড়েই একটি শপিংমলের ‘মাল্টিপ্লেক্সে’ বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে একাই হেঁটে মেসে ফিরছিলেন। আর তখনই তাঁর পিছু নিয়েছিল প্রাক্তন প্রেমিক সুশান্ত চৌধুরী। মেসের সামনে গলিতে একা পেয়ে সুতপার সঙ্গে সুশান্তের কথা কাটাকাটি। তার পরে ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকে সুতপাকে। চিৎকারে লোকজন বেরিয়ে আসেন।
গত বছর ২ মে সন্ধ্যায় ৬ টা ৩৫ মিনিটের এই ঘটনায় চমকে ওঠেন এলাকাবাসী। প্রত্যক্ষদর্শীরা সুশান্তের হাত থেকে সুতপাকে বাঁচাতে গেলে সুশান্ত পিস্তল উঁচিয়ে (পরে পুলিশ জানতে পারে খেলনা পিস্তল) প্রত্যক্ষদর্শীদের শাসাতে থাকে। সেই সঙ্গে সুশান্ত প্রত্যক্ষদর্শীদের বলতে থাকে এক জনকে খুন করলেও যা হবে, দশ জনকে খুন করলেও তাই হবে। এ ভাবে ভয় দেখাতে থাকার পাশাপাশি সুতপাকে ছুরি দিয়ে কোপাতে থাকে। মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লে সুশান্ত সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে সেদিন রাতে শমসেরগঞ্জে পুলিশের হাতে ধরা পড়া সুশান্ত। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার সুশান্তর ফাঁসির শাস্তির নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
বহরমপুরের গোরাবাজারের মতো জনবহুল জায়গায় এমন খুনের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন বহরমপুরবাসী। ঘটনার পর থেকে শহরে অনেক মহিলা একা বেরোতে ভয় পাচ্ছিলেন। ঘটনার পরে সে সময় অনেক মহিলাকে আত্মরক্ষার পাঠ নিতে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গিয়েছিল। সেই ঘটনার প্রায় ১৬ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরেছে বহরমপুর। কিন্তু সুতপা চৌধুরী খুনের ঘটনা এখনও বহরমপুরবাসীর মুখে মুখে ঘোরে। সুতপা আদতে মালদহের ইংরেজবাজারের বাসিন্দা এবং সুশান্তও পুরনো মালদহের বাসিন্দা হলেও ঘটনাস্থল ছিল বহরমপুর। যার জেরে এমন নৃশংস খুনের ঘটনায় কী শাস্তি হয় সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন বহরমপুরবাসী। শেষ পর্যন্ত সুশান্তকে ফাঁসির নির্দেশ আদালতের বিচারক শুনিয়েছেন। এতে খুশি বহরমপুরের আমজনতা। যে এলাকায় সুতপা খুন হয়েছিলেন সেই এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তাঁরা রায়ে খুশি। এই অপরাধে এমন শাস্তি জরুরি ছিল।