প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রথম কিস্তিতে ৬০ হাজার টাকা পান বৃদ্ধা। অভিযোগ, ওই টাকার অর্ধেক ‘কাটমানি’ হিসাবে নিয়ে নেন পঞ্চায়েত প্রধান।
এক চিলতে টিনের ঘর। অন্ধ মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা করে যা পান, তাতে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন সংস্থানের জোগাড় করতে গেয়ে বেগ পেতে হয় আনোয়ারা বেওয়াকে। সেই বৃদ্ধার কাছেই ‘কাটমানি’ চাওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত এক পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, দাবি মতো ‘টাকা’ না পেয়ে ওই বৃদ্ধাকে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। মালদহের রতুয়া-২ ব্লকের শ্রীপুর-২ পঞ্চায়েতের এই ঘটনায় পঞ্চায়েত প্রধান সেরিনা বিবি-সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে পুখুরিয়া থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
সুবিচার চেয়ে মালদহের জেলাশাসকের কাছেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আনোয়ারা। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান। অন্য দিকে, এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেছে বিজেপি। তাদের দাবি, প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনে নামবে গেরুয়া শিবির।
শ্রীপুর-২ পঞ্চায়েতের বড়াইল গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারা। তাঁর এক চিলতে টিনের ঘর। ছাউনি টালির। সংসার বলতে তিনি এবং তাঁর এক মেয়ে। ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চলে। এ হেন আনোয়ারা বছর দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। প্রথম কিস্তিতে ৬০ হাজার টাকাও পান। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, ওই টাকার অর্ধেক অর্থাৎ, ৩০ হাজার টাকাই নাকি ‘কাটমানি’ হিসাবে নিয়ে নেন পঞ্চায়েত প্রধান সেরিনা। সম্প্রতি দ্বিতীয় কিস্তির ৫০ হাজার টাকা আনোয়ারার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। অভিযোগ, সেখান থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন পঞ্চায়েত প্রধান।
এ বার আর টাকা দিতে রাজি হননি আনোয়ারা। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কয়েক দিন পরে তিনি টাকা দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। তাতেই নাকি ক্ষেপে যান পঞ্চায়েত প্রধান সেরিনা বিবি। অভিযোগ, আনোয়ারাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁর গবাদি পশু পর্যন্ত তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। এই পুরো ঘটনার কথা জানিয়ে পুখুরিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই বৃদ্ধা।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরাও। আজাদ আলি নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এই ঘটনার সুবিচার চাই।’’ এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। উত্তর মালদহ সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। প্রশাসন ঘটনার তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করুক। তদন্তের নামে ঢিলেমি করলে চলবে না। তদন্ত প্রক্রিয়ায় দেরি হলে আন্দোলনে নামবে বিজেপি।’’
অন্য দিকে, মালদহ জেলা তৃণমূল সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সির দাবি, ‘‘কেউ যদি অন্যায় করে, দল পাশে থাকবে না। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’ পুলিশ জানিয়েছে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।