সুকান্তের উদ্দেশে উদয়নের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘উনি প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টার নাকি? আমায় শুধরে যেতে বলছেন!’’ —ফাইল চিত্র।
সুকান্ত মজুমদারের আক্রমণের কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন উদয়ন গুহ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর দাবি, এই মুহূর্তে তাঁর বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে নামলে বিজেপির রাজ্যসভাপতি সুকান্তের পরাজয় নিশ্চিত।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের গাড়িতে হামলার ৪ দিন পর মঙ্গলবার দিনহাটায় গিয়ে যাবতীয় অশান্তির জন্য তৃণমূল বিধায়ক উদয়নকে দায়ী করেন বালুরহাটের বিজেপি বিধায়ক সুকান্ত। একই সঙ্গে রেকর্ড ভোটে জেতা উদয়নকে তিনি ‘কম্পার্টমেন্টাল বিধায়ক’ বলে কটাক্ষ করেন। আর তার অনতিবিলম্বে পাল্টা দিলেন উদয়ন। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে উদয়নের মন্তব্য, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি। আমি বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করছি। আর উনি (পড়ুন সুকান্ত) লোকসভা থেকে পদত্যাগ করুন। আগামিকাল ভোট হোক। যদি আমি হারি তা হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। যদি উনি হারেন তা হলে ওঁকে রাজনীতি ছেড়ে দিতে হবে।’’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে স্বল্প ব্যবধানে হেরে যাওয়া উদয়ন উপনির্বাচনে জয়ী হন প্রায় দেড় লক্ষের বেশি ভোটে। তাঁকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই উদয়ন কিছু দিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছিলেন। ওই ‘কর্মসূচির’ পর প্রথম যে দিন নিশীথ বিজেপির কর্মসূচি নিয়ে দিনহাটার বুড়িরহাটে যান, সেখানে তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ করেন তৃণমূল কর্মীসমর্থকেরা। এর পর তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দু’পক্ষই অভিযোগ করে তাঁদের উপর বোমা-গুলি-তির নিয়ে আক্রমণ হয়েছে। নিশীথ অভিযোগ করেন, তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল তৃণমূল। ওই ঘটনায় বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ এবং শাসকদলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে মঙ্গলবার দিনহাটা পরিদর্শনে যান সুকান্ত। সেখানে তিনি পুরো ঘটনায় কাঠগড়ায় তোলেন উদয়নকে। বলেন, ‘‘দিনহাটার বিধায়ক (উদয়ন গুহ) কম্পার্টমেন্টাল বিধায়ক। গাড়ি ভর্তি করে লোক নিয়ে এসে আমাদের কর্মীসমর্থকদের ওপর অত্যাচার এবং বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। আমরা বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছি, এখনও সময় আছে শুধরে যান। না হলে আমাদের এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যে তখন শুধরানোর সময় পাবেন না।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘মানুষের সমর্থন হারিয়ে ফেলেছেন উদয়ন। এখন যদি দিনহাটায় ভোট হয় তা হলে ৫০ হাজার ভোটে উনি হারবেন।’’
ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উদয়ন বলেন, ‘‘জনসমর্থন নেই বলেই (সুকান্তের) ৬০-৭০টি গাড়ি নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করতে বের হয়েছেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সুকান্তবাবু কি প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টারমশাই যে আমাকে শেখাবেন কী ভাবে শুধরে যেতে হবে? আগে নিজেরা শুধরে যান। তার পর অন্যদের শেখাবেন।’’
সব মিলিয়ে গত কয়েক দিন ধরে দিনহাটায় যে রাজনৈতিক চপান-উতোর চলছিল, তা আরও জোরাল হল দুই পক্ষের নেতার আক্রমণ এবং প্রতিআক্রমণে।