দুর্ভোগ: ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি। তাই এ ভাবেই উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা। কোচবিহারের চান্দামারি এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির দাওয়ায় ত্রিপল টাঙিয়েই শুরু হয়েছে নতুন লড়াই। কেউ কেউ খোলা আকাশের নীচেই উনুন তৈরি করে দু’মুঠো চাল ফুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছিলেন। তার মধ্যেই আবার বৃষ্টি। রাত থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। জলে-কাদায় থইথই হল চারদিক। বুধবার কোচবিহারের ঝড়বিধ্বস্ত এলাকায় দেখা গেল এমনই দৃশ্য। বৃষ্টির সঙ্গে মিশে গেল অজস্র চোখের জল।
বাড়ির দাওয়াতেই বসেছিলেন আজিনা বিবি। বললেন, “ঘর নেই। খাবার নেই। কিছুই নেই। কোনও রকমে ত্রিপল টাঙিয়ে রাত কাটিয়ে দিচ্ছি। তার মধ্যে রাতের বেলা খুব বৃষ্টি হয়েছে। আরও কষ্ট বেড়েছে।” অর্জুন পাল বললেন, “সব তো শেষ। এখন আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। বৃষ্টি সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
রবিবার সন্ধ্যায় ঝড়ের দাপটে তছনছ হয়ে যায় কোচবিহারের এক নম্বর ব্লক। বিশেষ করে সুটকাবাড়ি, মোয়ামারি, ঘুঘুমারি এলাকার একটি অংশের মানুষ নিরাশ্রয় হয়ে পড়েন। প্রচুর মানুষ জখম হন। দু’জনের মৃত্যুও হয়। ওই রাতে কেউ রাস্তার উপরে, কেউ রেললাইনে, কেউ খোলামাঠে দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়েছেন। তার পরে তাঁদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি ত্রিপল ও ত্রাণ। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, যে মানুষরা ঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁদের বেশিরভাগ কৃষক ও শ্রমিক। প্রায় প্রত্যেকেই টিন দিয়ে বাড়ি তৈরি করেছিলেন। সেই বাড়ি ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছে। নতুন বাড়ি তৈরি নিয়েই চিন্তিত প্রত্যেকেই। দিনমজুরির কাজ করেন মকসেদুল হক। ভাঙা ঘরের একটি অংশে ত্রিপল টাঙিয়ে আপাতত অস্থায়ী আস্থানা গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সেখানেই রয়েছেন ঝড়ের পর থেকে।
মকসেদুল বলেন, “এখন রমজান মাস। সে জন্য নিয়ম করতে হয়। রাতের দিকে খাওয়াদাওয়া হয়। এই তিনদিন ধরে তো খুব কষ্ট! গতকাল মাঝ রাতে বৃষ্টি নেমে পড়ল। ত্রিপল দিয়ে মাথা রক্ষা হয়েছে। কিন্তু গড়িয়ে গড়িয়ে জল ত্রিপলের ভিতরে চলে এল। সবাই মিলে বসে রাত কাটালাম।” পাশেই সাজিনা খাতুনের বাড়ি। তাঁর স্বামীও দিনমজুরি করে সংসার চালান। ত্রাণে সাহায্য পাওয়া ত্রিপল দিয়ে তৈরি করেছেন ঘর। বললেন, “আমাদের তো পাকা বাড়ি ছিল না। টিন দিয়ে
বাড়ি তৈরি করতেই অনেক কষ্ট হয়েছে। এ বার তো ত্রিপলের নিচে থাকতে হচ্ছে। এমনিতেই রাতে ঘুম হয় না। তার উপরে বৃষ্টি হয়েছে। খুব কষ্টে থাকতে হয়েছে।”