উড়ান: কোচবিহারের রসিক বিলে দেখা মিলল এই ঈগলটির। নিজস্ব চিত্র
রসিকবিল এলাকায় সোমবার দেখা মিলল একটি বিরল প্রজাতির ঈগলের, প্রায় দু’দশক পর। মূলত ইউরোপের বনাঞ্চলের বাসিন্দা বড়সড় এই অতিথি পাখিকে ইংরেজি পরিভাষায় বলা হয় ইস্টার্ন ইম্পিরিয়াল ঈগল। এরা অভাবনীয় ক্ষিপ্রতায় শিকার ধরতে পটু। বহুদিন পর এই প্রাপ্তিতে খুশি বন দফতর থেকে পাখিপ্রেমীরা।
বন দফতরেরই উদ্যোগে এখন রসিকবিলে চলছে পাখিসুমারি। পাখি গণনার কাজে রয়েছেন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের সদস্যেরা। চারটি দলে মোট ১২ জন ওই সুমারির কাজ করছেন। এ দিনই তাঁদের নজরে আসে বড়সড় আকারের ওই ঈগলটি। বনকর্তা ও পাখি বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্য এশিয়াতেও এই ঈগলের দেখা মেলে। শীতের মরসুমে অপেক্ষাকৃত কম ঠান্ডার এলাকায় অস্থায়ী ভাবে ডেরা বাঁধতে চলে যায় এরা। কোচবিহারের ডিএফও বিমান বিশ্বাস বলেন, “বিরল প্রজাতির শিকারি ঈগলের মধ্যে বৃহৎ ঈগল অন্যতম নাম। এমন পাখির সন্ধান বেশ ইতিবাচক। আমরা খুশি।” তিনি আরও বলেন, ‘‘গণনাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, প্রায় কুড়ি বছর আগে ওই প্রজাতির ঈগল শেষবার রসিকবিলে দেখা গিয়েছিল।’’
পাখিগণনা দলের সদস্য তথা ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “রসিকবিলে আশির দশকে শেষবার এই প্রজাতির ঈগলের দেখা মিলেছিল। তারপর ওই অতিথি পাখিদের দেখা যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই এবারের গণনায় এটা বিরাট প্রাপ্তি।” তিনি জানান, মঙ্গোলিয়া, রোমানিয়া থেকেই এই ঈগল হিমালয় পেরিয়ে এসেছে বলে অনুমান। পাখি বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, জলের থেকেও স্থলে শিকার ধরতে বেশি পটু এই ঈগল। ছোট ইঁদুর, খরগোশ, সাপকে নিমেষে ঠোঁটে তুলে নিতে পারে এরা। হরিণ শাবকেরাও এদের শিকার হয় মাঝেমধ্যে। গজলডোবা থেকে ডুয়ার্সের নারারথলিতে সম্প্রতি পাখিসুমারিতে এই ঈগল দেখা যায়নি। বিশাল চেহারার এই প্রজাতির ঈগলের পালক কালচে বাদামি রঙের হয়।
অনিমেষ বলেন, ‘‘স্টেপি ঈগলও এবার প্রথম রসিকবিলে পেয়েছি। ফ্যালকেটেড ডাক মিলেছে তিন জোড়া। গজলডোবায় এবার এক জোড়া ওই পাখি দেখা গিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, বিশাল আকারের স্টেপি ঈগলও উত্তরবঙ্গে সচরাচর দেখা যায় না। এই ঈগলের দেহের পালক গাঢ় খয়েরি রঙের হয়। এবারে প্রচুর গ্রে হেডেড ল্যাপউইংয়ের সন্ধান মিলেছে। সংখ্যা প্রায় ১৮০০। রসিকবিলে আগে ওই পাখি এত আসেনি।
গণনার ফলে জানা গিয়েছে, এ ছাড়া অতিথিদের তালিকায় রয়েছে রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, কমন পোচার্ড, গ্যাডওয়াল ডাক প্রভৃতি নানান পরিযায়ীরাও। এ বারের গণনায় ৫৪টি প্রজাতির ৪,৬৪৫টি পরিযায়ী পাখি মিলেছে।