আলোচনা শেষে ঘরে ফেরার পথে। —নিজস্ব চিত্র।
আসলে দলে থেকেও তার বিপত্তির অন্ত নেই। কখনও দলের সঙ্গে অন্যত্র যেতে একাই আটকে পড়ছে, আবার কখনও দুই হাতির যুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছে এক জন। এ বার একেবারে দেশ পার করে অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছিল একটি দলছুট হস্তিশাবক। কাঁটাতারের বেড়াজাল না থাকায় ভারতের হাতি নেপালে ঢুকে পড়ার খবর হামেশাই পাওয়া যায়। তবে পূর্ণবয়স্ক হাতিদের ফেরানো কঠিন হয়ে যায়। প্রায় যায় না বললেই চলে৷ তবে হস্তিশাবক দল থেকে বেরিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার ঘটনা বিরল।
বাচ্চা হাতি ও মা হাতির সম্পর্ক এতটাই স্পর্শকাতর দলের অন্যান্য হাতিরও সেই হস্তিশাবকের পাশে ঘোরাফেরা প্রায় মানা। বেশ কয়েক দিন একা একাই ঘুরে ফিরে বেড়ায় এই হস্তিশাবকটি। কিন্তু অঞ্চলভেদে মানুষের মতো জীবজন্তুদেরও কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। দলছুট শাবকটি এশিয়ান হাতি। তার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দেখেই চিহ্নিত হয় সেটি ভারতের। অগত্যা দুই দেশের বনবিভাগের সমঝোতা বৈঠক শুরু হয়। দীর্ঘ বৈঠকের পর হস্তিশাবকটি ফিরল ঘরে। সোমবার বিকালে শিলিগুড়ির মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত নকশালবাড়ির ইন্দো-নেপাল সীমান্তে নেপাল সরকার হস্তিশাবকটিকে তুলে দিল ভারতের হাতে।
সপ্তাহখানেক আগে ওই হস্তিশাবককে ইন্দো-নেপাল সীমান্তের নকশালবাড়ির মেচি নদী সংলগ্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। নদী পার করে সে ঢুকে পড়ে নেপালের বামনডাঙিতে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে নেপালের কাঁকরভিটা হয়ে ধুলাবাড়ি পর্যন্ত চলে যায়৷ এলাকাবাসীরাই প্রথমে হস্তিশাবকটিকে দেখে। তাঁরাই নেপালের বন দফতরকে খবর দেন। পরে নেপাল বনবিভাগ খবর দেয় এ দেশের কার্শিয়াং বনবিভাগকে৷ এ দিকে গত ২ দিন ধরে কার্শিয়াং বনবিভাগ ওই হস্তিশাবকটিকে বিভিন্ন এলাকায় খুঁজছিল৷ দুই দেশের সমঝোতায় হস্তিশাবকটিকে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয় নেপাল সরকার। সোমবার বিকেল নাগাদ মেচি নদীর দুই সীমান্তে দুই দেশের বন আধিকারিকরা উপস্থিত হন৷ হস্তিশাবকটিকে নেপালের ভেতর থেকে মেচি নদী সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে আসতে সাহায্যের হাত বাড়ান দুই দেশের সীমান্ত লাগোয়া সাধারণ মানুষেরা। এক প্রকার ধ্বস্তাধস্তি করে সীমান্তের বামনডাঙ্গিতে ভারতীয় বনবিভাগের হাতে হস্তিশাবকটিকে তুলে দেওয়া হয়।
নেপালের মেচি নগরের নগরপালিকার পঞ্চায়েতের সভাপতি অর্জুনকুমার কার্কে বলেন, ‘‘দুই দেশের মধ্যে হাতির দলের চাপ তো বাড়ছেই। তবে এই হস্তিশাবকটি দল থেকে ছুটে নেপালে ঢুকে অনেকটা দূরে চলে গিয়েছিল। নেপালের উদ্ধারকারী দল ধুলাবাড়ি এলাকা থেকে তাকে ধরে। পরে ভারত সরকারের বনবিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সীমান্তে নেপালের হাতি বা ভারতীয় হাতির দল ঢুকে পড়লে দু’দেশেরই সহযোগিতা কাম্য।’’ কার্শিয়াং বন দফতরের এডিএফও দেবাশিস ভঞ্জ বলেন, ‘‘৫ থেকে ৭ দিন ধরে হস্তিশাবকটিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। নেপাল সরকার ভীষণ ভাবে সহযোগিতা করেছে৷ সীমান্তে মেচি নদীর পার থেকে হাতিটিকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে ওরা। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছে হস্তিশাবকটি। এখন অসুস্থ থাকতে পারে। ওকে চিকিৎসার জন্য গরুমারায় পাঠানো হচ্ছে।’’