উদয়ন গুহ। — ফাইল চিত্র।
বংশীবদন বর্মণের সঙ্গে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী উদয়ন গুহর বিরোধ ক্রমশ বাড়ছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর কোচবিহার রাসমেলার মাঠ থেকে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বংশীবদন, উদয়নের কড়া সমালোচনা করেন। উদয়ন কোচবিহারের ইতিহাস জানেন না বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। শনিবার দিনহাটায় রাজ্যভাগের চক্রান্তের প্রতিবাদে মিছিল করে তৃণমূল। উদয়নের ডাকেই ওই মিছিল হয়। ওই রাতে সমাজ মাধ্যমে উদয়ন লেখেন, ‘‘আজ বিজেপি, স্বঘোষিত মহারাজ এবং মদনের মামা সকলে বুঝে গেলেন, বাংলা ভাগ অত সহজ নয়।’’ মদনের মামা বলতে তিনি বংশীবদনকে বুঝিয়েছেন। বংশীবদন বলেন, ‘‘উনি (উদয়ন গুহ) কোচবিহারের ইতিহাস জানেন না। তাই নানা কথা বলছেন। কোচবিহার কখনও বাংলার অংশ ছিল না।’’
কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গ জুড়ে এখন ‘রাজ্য ভাগ’ নিয়ে হইচই চলছে। এক পক্ষ সরাসরি রাজ্য ভাগের দাবিতে সরব হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস্ অ্যাসোসিয়েশন, কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজ়েশন, কামতাপুর পিপলস্ পার্টির মতো সংগঠন। বিজেপির বিধায়ক-সাংসদেরাও একাধিক বার উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার দাবি তুলে সরব হয়েছেন। অন্য দিকে, তৃণমূল সরাসরি রাজ্য ভাগের চক্রান্তের অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমেছে। গত কিছুদিনে দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী উদয়ন গুহ রাজ্যভাগের দাবিদারদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তিনি প্রকাশ্য সভা থেকে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন, রাজ্য ভাগের চেষ্টা হলে হাঁটু ভেঙে দেওয়া হবে। এমনকি, রাজ্য ভাগ করতে এলে রক্ত ঝরবে বলেও সতর্ক করেন। তা নিয়ে উদয়নকে পাল্টা আক্রমণ করেন গ্রেটার নেতা অনন্ত রায় (মহারাজ)। কেএলও প্রধান জীবন সিংহও নাম না করে উদয়নকে সতর্ক করেন।
আরেক গ্রেটার নেতা বংশীবদন অবশ্য বরাবর তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। এ বার বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভোট প্রচারও করেন বংশীবদন। তাঁকে রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি, রাজবংশী উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। গত ২০ সেপ্টেম্বর শহিদ দিবস পালন করে গ্রেটার। ওই দিন রাসমেলার মাঠে প্রকাশ্য সভা থেকে রাজ্যের দাবিতে সরব হন বংশীবদন। তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহর কড়া সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহারের তৃণমূল নেতারা নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি করে ভোট হেরেছেন। আর গ্রেটার ভোট দেয়নি বলে মুখ্যমন্ত্রীকে বুঝিয়ে রাজবংশী ভাষার ২০০টি স্কুলের অনুমোদন আটকে দেওয়া হয়েছে। ওই অনুমোদন না দিলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তিনি অন্য কিছু ভাববেন বলেও জানান। তৃণমুলের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য বংশীবদনের সঙ্গে কোনও বিরোধে যেতে নারাজ। দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক জানিয়েছেন, সব আলোচনার মাধ্যমেই মিটে যাবে। তার পরে ফের উদয়নের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।