ইংরেজবাজার পুরসভা ১৮৬৮ প্রতিষ্ঠিত হয়। মালদহ শহরের পূর্বে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাঁওতাল পরগনা, উত্তরে উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণে মুর্শিদাবাদ জেলা।
মালদহ জেলা আদালত। —নিজস্ব চিত্র।
আমের শহর মালদহ উত্তরবঙ্গের প্রবেশ পথ। ২০১৩ সালে মালদহ ভারতের প্রথম নারী আদালতযুক্ত শহর। গঙ্গা, মহানন্দা, ফুলহার, কালিন্দী দ্বারা বিধৌত এই মালদহ কত শত রাজা ও রাজ্যের উত্থান, জয়জয়কার ও পতনের সাক্ষী। পুরনো ধ্বংসাবশেষের উপর আবার নতুন রাজত্ব দেখেছে এই শহর। আর ক’দিন পরেই পুরসভার ভোট। তার প্রাক্কালে কিছু কথা।
ইংরেজবাজার পুরসভা ১৮৬৮ প্রতিষ্ঠিত হয়। মালদহ শহরের পূর্বে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাঁওতাল পরগনা, উত্তরে উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণে মুর্শিদাবাদ জেলা। শহরের মধ্য দিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চলে গিয়েছে। ইংরেজবাজার পুরসভায় মোট ২৯টি ওয়ার্ড। শহরের আয়তন বর্তমানে ১৩.২৫ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুপাতে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১৬৩২৮.১৫ প্রতি বর্গ কিলোমিটার।
শহরের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে চলা মহানন্দা একটি প্রাচীন নদী। বিভিন্ন সাম্রাজ্যের উত্থান পতনের নীরব সাক্ষী। আমাদের প্রিয় শহর প্রাচীন গৌড় এবং পান্ডুয়া (পৌন্ড্র বর্ধন) সীমার মধ্যে ছিল। ১৮১৩ সালে ব্রিটিশ শাসকগণ এক জন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টর নিয়ে পত্তন করেছিলেন ইংরেজ বাজার। ১৮৩২ সালে মালদার ট্রেজারি বা সরকারি খাজাঞ্চিখানা খোলা হয়।
শহরের জেলা স্কুল ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। এই স্কুলের প্রখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে বিনয় সরকার ,অসীম দাশগুপ্ত, সুভাষ ভৌমিক, রমেশচন্দ্র ঘোষের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। শহরের অন্যান্য বিদ্যালয়ের মধ্যে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির, বার্লো গার্লস হাই স্কুল, আক্রুরমণি করোনেশন ইনস্টিটিউশন, ললিতমোহন হাই স্কুল, মালদহ টাউন স্কুল, চিন্তামণি চমৎকার গার্লস হাই স্কুল , ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির মধ্যে সেন্ট জেভিয়ার্স ইংলিশ অ্যাকাডেমি, নর্থ পয়েন্ট ইংলিশ অ্যাকাডেমি, সেন্ট মেরি ইংলিশ অ্যাকাডেমি, মালদহ হাই মাদ্রাসা এই জেলার নাম করা সমস্ত স্কুল। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, মালদহ কলেজ, মালদহ ওমেন্স কলেজ,মালদহ জেলা হাসপাতাল এবং মালদহ মেডিক্যাল কলেজ এই শহরে অবস্থিত।
ইংরেজবাজারের সঙ্গে রেলপথ এবং সড়ক পথে দেশের অন্যান্য যে কোনও অংশের সঙ্গে যোগাযোগ বেশ ভাল। এখানে পূর্ব রেলওয়ের মালদহ বিভাগীয় কার্যালয় অবস্থিত। গৌড় বাস টার্মিনাল এবং মালদহ টাউন রেলওয়ে স্টেশন বর্তমানে এই ইংরেজবাজার পুরসভাতেই।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পুরসভার ভোট। যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক তাদের কাছে আমাদের আশা, তারা নগরোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিষেবার দিকেও নজর দেবেন। সমস্ত নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে।
মালদহ শহরের মূল সমস্যা আবর্জনা। পুরসভার নিজস্ব ভ্যাট না থাকায় সে সমস্যা আরও বেড়েছে। প্রতি দিন প্রায় ৪০ ট্রাক্টর আবর্জনা ফেলা হয় গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়। শহরের মধ্যে যাতে কোনও খোলা জায়গায় আবর্জনার স্তূপ না থাকে এবং প্রতিটি বাড়ি থেকে আবর্জনার সংগ্রহ করে তা আলাদা করে রিসাইক্লিং করতে হবে। প্লাস্টিক দূষণ মুক্ত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা ভীষণ জরুরি। ব্যবহৃত প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং সেন্টার শহরে আবশ্যক বর্তমানে। নর্দমার নিকাশি নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে যাতে জল কোথাও না জমে যায়।
পুরসভার বিভিন্ন অফিসের ছাদে বাগান তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করছি। নগরায়নের ধাক্কায় গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে যথেচ্ছ ভাবে। গাছ রেখে কী ভাবে উন্নয়ন করা যায় কর্তৃপক্ষকে ভাবতে অনুরোধ করছি। সমস্ত বিষয়ে সরকারের ব্যবস্থাপনায় না তাকিয়ে থেকে নাগরিকদের সচেতনতার খুব দরকার। বাড়ির ছাদে গাছ আমরা যদি সবাই লাগাই ছাদ বাগান করি তবে অক্সিজেনের চাহিদা অনেকটা মেটানো সম্ভব।
শহর আজ কংক্রিটের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে। শহরের জমি ব্যবহারে পরিবেশের কথা ভেবে পরিকাঠামো পাশের দিকে একটু বেশি করে ভাবতে অনুরোধ করছি। শহরের বিস্তার করুন। যে হেতু আরও মানুষ ভবিষ্যতে শহরে বসবাস করবেন, তাই নকশা করে রাখতে হবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে।
দূষণ ও যানজটমুক্ত শহর উপহার দিন আমাদের এই আমাদের আশা বিজয়ী দলের কাছে। নিছক সৌন্দর্যায়ন নয়, পরিবেশবান্ধব শহর চাই। যেখানে শিশুদের সঙ্গে বয়স্কদের জন্যও থাকবে খোলা মাঠে মুক্ত হাওয়ার ব্যবস্থা।