Bappi Lahiri

Bappi Lahiri: ‘শিলিগুড়ি এলেই বাড়িতে থাকা হয়, বাকিটা তো হোটেলেই কেটে গেল’, ঝাপসা হয়ে এল ভাইয়ের চোখ

 

 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:৫৯
Share:

পরিবারের সঙ্গে চা-বাগানে বাপ্পি লাহিড়ি। নিজস্ব চিত্র।

কর্মসূত্রে জীবনের সিংহভাগ সময়েই কেটে গিয়েছে মুম্বইয়ে। কলকাতায় রয়েছে বাড়ি। কিন্তু বাড়ি বলতে বাপ্পি লাহিড়ি বুঝতেন শিলিগুড়ির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘাযতীন পার্কের বাড়িটি। তাঁর মৃত্যুতে আবেগবিহ্বল মাসতুতো ভাই ভবতোষ চৌধুরী বললেন, ‘‘বাড়ি বলতে ও বুঝত শিলিগুড়ির এই বাড়িটিই।’’

Advertisement

ভবতোষবাবুর কথায়, ‘‘সব সময়ই ভাইয়ের (বাপ্পি) জন্য তৈরি থাকত আলাদা ঘর। উত্তরবঙ্গের দিকে এলেই একমাত্র ঠিকানা ছিল শিলিগুড়ির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘাযতীন পার্কের এই বাড়ি। পিঠাপিঠি ভাই ছিলাম আমরা। ছোটবেলা থেকেই দুই ভাইয়ের দুষ্টুমিতে অতিষ্ঠ ছিল বাড়ির লোকজন। সাফল্যের শিখরে পৌঁছনোর পরও একটু অহং বোধ দেখিনি ওর মধ্যে। এমনকি বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমাতেও এই বাড়ি থেকেই অন্যত্র গিয়েছিল ওরা।’’ বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।

মঙ্গলবার রাতে মুম্বইয়ের হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সঙ্গীতকার। বুধবার সকাল সকাল ফোনটা বেজে উঠতেই বুকটা কেঁপে উঠেছিল ভবতোষবাবুর। ফোনের অপরপ্রান্তের কণ্ঠ জানাল বাপ্পি লাহিড়ি আর নেই। শুনে কিছুটা সময় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। ঘুরেফিরে আসছিল শৈশবের স্মৃতি।

Advertisement

ভবতোষের কথায়, ‘‘ছোটবেলায় কলকাতা মানেই আমার কাছে ছিল গড়িয়ার বাঁশদ্রোনির বাড়ি আর শিলিগুড়ি মানেই বাপ্পিদের কাছে ছিল আমাদের এখানকার বাড়ি। পরবর্তীতে বাড়ি বিক্রি করে ওরা মুম্বই চলে যায়। সেখানেও মাসে পর মাস আমরা কাটিয়েছি একসঙ্গে। ও যে এত বড় মাপের শিল্পী হয়েছে, তা কিন্তু ওর ব্যবহারে কখনও প্রকাশ পায়নি।’’

তবে বাড়ি বিক্রি করে চলে গেলেও শিলিগুড়ির সঙ্গে শিকড় আলগা হয়নি বাপ্পির। ভাইয়ের কাছে তিনি বলতেন, ‘‘শিলিগুড়ি এলেই একমাত্র বাড়িতে থাকা হয়, বাকি জীবন তো হোটেলেই কেটে গেল।’’ বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে যেমন ব্যবহার ছিল আমাদের সঙ্গে, শেষ দিনও তাই। বাপ্পি বা ওর ছেলে-মেয়ে, বৌমাদের কাছ থেকেও একই ব্যবহার পেয়েছি।’’ বলতে বলতে আবার ডুব দেন ফেলে আসা দিনে।

ভবতোষের কথায়,‘‘বাপ্পি যখন বিয়ে হল, সেকি হই-হই কাণ্ড। মধুচন্দ্রিমাতেও শিলিগুড়ির বাড়িতে নতুন বউ ও পরিবার নিয়ে এসে থেকেছিল। এখান থেকেই অন্যত্র যায় মধুচন্দ্রিমায়। এর পর বছরের বিভিন্ন সময় যখনই উত্তরবঙ্গে কাজে বা ঘুরতে আসত ঠিকানা ছিল এই বাড়ি। এখান থেকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে কখনও লাটাগুড়ির জঙ্গল, কখনও গরুমারা জঙ্গল তো কখনও বা পাহাড়ে বেড়াতে চলে যেত। সঙ্গী ছিলাম আমি ও বাপ্পি, আর ভাগনে ময়ূখ।’’

বুধবার বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে মুম্বই রওনা দেন ভবতোষ, ময়ূখরা। ভাইয়ের নিথর দেহর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে মন না চাইলেও দ্বায়িত্বের কাছে মাথা নত করতে হচ্ছে। গোটা বাড়ি জুড়ে শুধুই স্মৃতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement