প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রোগীর আত্মীয়স্বজনদের হাসপাতালে রাতে থাকার জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে একটি রাত্রিনিবাস তৈরি করা হয়েছিল। ২০২১ সালে সেই ভবন উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর তিন বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও সাধারণ মানুষের জন্য খুলল না ওই রাত্রিনিবাসের দরজা। ফলে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করে গাছের তলায় কিংবা টিনের ছাউনির নীচে কোনও রকমে রাত কাটাতে হয়, এমনই অভিযোগ রোগীর আত্মীয়দের।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং বালুরঘাট পুরসভা যৌথ ভাবে এই রাত্রিনিবাস বানিয়েছিল। উন্নত পরিকাঠামো যুক্ত এই ভবনে একসঙ্গে অন্তত ৫০ থেকে ৭০ জন মানুষ রাতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে ক্যান্টিনও। ২০২১ সালে তার উদ্বোধনও হয়। কিন্তু তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তা চালু করা গেল না। কেন এই রাত্রিনিবাসের তালা খুলল না, তার কোনও উত্তর নেই স্থানীয় প্রশাসন বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। প্রতি বারই প্রশাসনিক আধিকারিকেরা আশ্বাস দেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি বলেই অভিযোগ।
এই রাত্রিনিবাস তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল, বালুরঘাট হাসপাতালে আসা রোগীর আত্মীয়দের রাতে থাকার ব্যবস্থা করা। সম্পূর্ণ আধুনিক পরিকাঠামোযুক্ত এই রাত্রিনিবাস তিন বছর তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের আশপাশে কোথাও তেমন বড় হোটেলও নেই, যেখানে রাত কাটানোর জন্য ঠাঁই পাওয়া যায়। তাই রোগীর আত্মীয়দের ভরসা পুরনো রাত্রিনিবাস বা হাসপাতাল চত্বরের বিভিন্ন গাছের তলা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই রাত কাটাতে হয় তাঁদের। প্রায় প্রতি দিনই হিলি থেকে হরিরামপুর, কিংবা কুশমন্ডি থেকে কুমারগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার রোগীরা এসে ভিড় করেন হাসপাতালে। তাঁদের সঙ্গে আসেন আত্মীয়েরাও। তবে গোটা দিন কোনও রকমে কাটালেও রাতে থাকাই বড় সমস্যা তাঁদের কাছে।
এর আগে রাতে থাকার জন্য ‘সৌহার্দ্য’ নামে একটা ভবন তৈরি করা হয়েছিল। অভিযোগ, সেই ভবন ব্যবহার করার অনুমতি নেই সাধারণ মানুষের। চিকিৎসকদের দখলেই রয়েছে সেটা। বাইরে থেকে আসা চিকিৎসকেরা সেখানেই থাকেন। অন্য দিকে, নতুন তৈরি রাত্রিনিবাস ভবনের গেটেও তালা ঝুলছে। ফলে সমস্যায় পড়েন অনেকেই। সেই রাত্রিনিবাস খোলার জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর, রোগী কল্যাণ সমিতি এবং পুরসভা বার বার মিটিং করেছে। খোলার তারিখও ঠিক হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র দাবি করছেন, খুব দ্রুত এই রাত্রিনিবাস খুলে দেওয়া হবে। সঙ্গে থাকবে ক্যান্টিনও। সেই ক্যান্টিনে দুপুরের এবং রাতের খাবারের ব্যবস্থাও থাকবে। নির্ধারিত দামে সেই ক্যান্টিন থেকে খাবার খেতে পারবেন সাধারণেরা। বালুরঘাট পুরসভা এবং জেলা প্রশাসন এক সঙ্গে এই পরিষেবা চালু করতে চলেছে।
তবে পুরসভার চেয়ারম্যানের আশ্বাসের পরেও আশা দেখতে পাচ্ছেন না রোগীর পরিবারেরা। তাঁদের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরেও কেন তা চালু করা গেল না? উন্নত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁদের রাতে কষ্ট করে থাকতে হবে?