বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরলেন পড়ুয়ারা। — নিজস্ব চিত্র।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বাংলাদেশে। কলেজে কলেজে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলনের আগুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশে কার্ফু জারি করেছে শেখ হাসিনার সরকার। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ছাড়তে চাইছেন হাজার হাজার ভারতীয়। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই পড়ুয়া। বাংলাদেশের কোনও না কোনও কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁরা। শুধু ভারত নয়, নেপাল, ভুটান-সহ অন্যান্য দেশ থেকেও পড়ুয়ারা বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। তাঁরাও নিজের নিজের দেশে ফিরতে চাইছেন। ছেলেমেয়েদের ফেরার অপেক্ষায় বাবা-মায়েরা। কলেজ অনুমতি দিলেও নিরাপত্তার অভাবে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ঢুকতে পারছেন না অনেকেই। অন্য দিকে, স্থলবন্দর সীমান্ত বন্ধ হওয়ার কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ছেন আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ভারতে চলে আসা প্রসঙ্গে কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রংপুর এবং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের মোট ১৫ জন ছাত্রছাত্রী আজ (শুক্রবার) ভারতে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন ভারতীয়।’’ তবে এখনও বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে অনেকেই। তাঁদের মধ্যেই আছেন অসমের বাসিন্দা গোলাম মহম্মদ রসুল আলির কন্যাও। বাংলাদেশের রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী তিনি। মেয়েকে ঘরে ফেরাতে প্রতি দিনই চেকপোস্টে অপেক্ষা করছেন গোলাম। এমনকি, চেকপোস্ট পেরিয়ে বুড়িমারি পর্যন্ত গিয়েওছিলেন, কিন্তু মেয়েকে নিয়ে আসতে পারেননি।
গোলামের কথায়, ‘‘আমি মেয়েকে নিতে চেকপোস্ট পার করে বুড়িমারি পর্যন্ত পৌঁছলাম। তার পর মেয়েকে ফিরিয়ে আনার জন্য ফোনও করেছিলাম, কিন্তু কলেজ থেকে চেকপোস্ট পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা দিতে পারেননি। তাই বাংলাদেশ থেকে আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে পারলাম না। আমাকে একাই ফিরে আসতে হল ভারতে।’’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘কলেজ কর্তৃপক্ষ বাড়িতে ফেরার অনুমতি দিলেও নিরাপত্তা না দিতে পারায় মেয়ে ফিরতে পারল না। কলেজেই রয়ে গেল। মেয়ে বিদেশে আটকে রয়েছে। সেই আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। আমাদের সরকারের কাছে আবেদন ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে দেশে ফিরে আসে তার ব্যবস্থা করুক।’’
বেশ কয়েক দিন ধরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। স্তব্ধ জনজীবন। ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় টহল দিচ্ছে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী। এই আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে আটকে পড়েছেন ভিন্দেশের পড়ুয়ারা। ধাপে ধাপে তাঁদের ভারতে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত সরকার। শনিবারই ৭৭৮ জন পড়ুয়া ভারতে ফিরেছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। শুক্রবারের মতো শনিবারও কোচবিহারের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মেখলিগঞ্জ গেট দিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করেছেন ১৫ জন পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে এক জন ভারতীয়, এক জন মলদ্বীপ, এক জন ভুটান এবং বাকিরা নেপালের বাসিন্দা।
অন্য দিকে, স্থলবন্দর সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে আমদানি-রফতানি ব্যবসায়। চ্যাংড়াবান্ধা এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক অমরজিৎ রায় বলেন, ‘‘বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। আমাদের কাছে খবর রয়েছে প্রচুর লোক মারা গিয়েছেন। সেখানকার সরকার গন্ডগোল থামাতে ইতিমধ্যে সেনা নামিয়েছে। বাংলাদেশের এই গন্ডগোলের ফলে আমাদের ব্যবসার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২০০টি ট্রাক পোস্টে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) পর্যন্ত আমদানি-রফতানি চলছিল। কিন্তু আজ (শনিবার) থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি দিন তিনশোর উপর গাড়ি ভারত ও ভুটান থেকে বাংলাদেশে জিনিস নিয়ে যায়। প্রতি দিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু এখন কী হবে জানি না।’’