জন্মস্থান। নিজস্ব চিত্র
এখানেই ছিল তাঁর বাসভূমি। বটগাছের তলায় বসেই লিখেছিলেন কৃত্তিবাসী রামায়ণ। তাঁর স্মৃতিতে তৈরি হয়েছে সংগ্রহশালা এবং গ্রন্থাগার। প্রতি বছর নিয়ম করে পালিত হয় স্মরণোৎসব। কিন্তু আজও অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে সেই ঐতিহাসিক জায়গাটি।
শোনা যায়, শান্তিপুর ব্লকের বেলগড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের বয়রা গ্রামে বাস ছিল কৃত্তিবাস ওঝার। এখানেই বটগাছের তলায় বসে তিনি কৃত্তিবাসী রামায়ণ রচনা করেছিলেন বলে কথিত রয়েছে। সেই বটগাছের তলা অবশ্য বাধানো হয়েছে। তবে তা সারা বছর অবহেলার মধ্যে পড়ে থাকে। এর পাশে একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। কিন্তু সেটিও সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে।
এখানেই তৈরি হয়েছে কৃত্তিবাস স্মৃতি সংগ্রহশালা এবং গ্রন্থাগার। ১৯৬৭ সালে এই গ্রন্থাগার খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। তখন অবশ্য এর নাম ছিল অন্য। এখানে নানা বিষয়ের উপরে ১২ হাজারের বেশি বই রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলিই রামায়ণ সংক্রান্ত। ইংরেজি, হিন্দি, মৈথিলী, লাওস, নেপালি-সহ ১৪টি ভাষায় অনুবাদ হওয়া রামায়ণ সাহিত্য সংরক্ষিত রয়েছে এই গ্রন্থাগারে। এ ছাড়াও রয়েছে রামায়ণ সংক্রান্ত নানা গবেষণাপত্র এবং প্রবন্ধের সমাহার। ফ্রান্সের একটি গ্রন্থাগার থেকে আনা পুঁথির মাইক্রোফিল্ম এবং প্রিন্ট আউট রক্ষিত রয়েছে এখানে। এই পুঁথিই কৃত্তিবাসের লেখা আসল পুঁথি বলেই দাবি। সামগ্রিক ভাবে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এবং যাঁরা সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করেন বা পড়াশোনা করেন, তাঁদের জন্য এই সংগ্রহশালা এবং গ্রন্থাগার মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে। অভিযোগ, সে ভাবে এর কোনও প্রচার নেই প্রশাসনের তরফে। কৃত্তিবাসের হাতে লেখা পুঁথিটিও নেই এখানে। রয়েছে তাঁর বংশতালিকা।
রবিবার থেকে এখানে শুরু হয়েছে কৃত্তিবাস ওঝার স্মরণোৎসব। প্রতি বছর এই দিনে কিছুটা সেজে ওঠে এই জায়গা। আর বাকি বছর পড়ে থাকে উদাসীনতার অন্ধকারে। কিন্তু এই জায়গাকে সৌন্দর্যায়ন করে মানুষের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করলে তা পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠতেও পারত বলে মনে করছেন স্থানীয়দের অনেকে। এর কাছেই রয়েছে ভাগিরথী নদী। ফুলিয়ার বাসিন্দা কেশবলাল চক্রবর্তী দীর্ঘ দিন এখানে গ্রন্থাগারিক হিসাবে কাজ করে অবসর নিয়েছেন। তিনি বলেন, “সাহিত্য এবং ইতিহাসের বহু অমূল্য সম্পদ এখানে সংরক্ষিত হচ্ছে। সেই বটগাছও রয়েছে। কিন্তু একে ঘিরে পর্যটনের উদ্যোগ করা হল না।”
এখানে কৃত্তিবাসের হাতে লেখা পুঁথি দেখতে চাইলেও হতাশ হতে হয় মানুষকে। কেশববাবু বলছেন, “এর জন্য তো ভারত সরকারকে কথা বলতে হবে ফ্রান্সের সঙ্গে। এখানে আপাতত সেই পুঁথির একটি মাইক্রোফিল্ম করে রাখা আছে।”
পর্যাপ্ত বিশ্রামাগারের অভাবেও মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। দীর্ঘ দিন ধরে জাতীয় সড়কের ধারে কৃত্তিবাসের স্মৃতিতোরণ এই এলাকার ল্যান্ডমার্ক হয়েছিল। সম্প্রতি জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের কাজের জন্য তা ভাঙা হয়েছে। নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু বলেন, “এই তোরণ সড়ক সম্প্রসারণের কাজ হয়ে গেলে আবার নতুন করে তৈরি করা হবে।” কৃত্তিবাস ওঝার বাসভূমি ঘিরে পর্যটনের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে উদ্যোগ করেছি। এখানে বিশ্রামাগারের সংস্কারের পাশাপাশি আলো, সৌন্দর্যায়ন সব কিছুই করা হবে।”