Suvendu Adhikari on CAA

অবিলম্বে সিএএ চালু হবে, নবদ্বীপের মতুয়া মেলায় আবার দাবি শুভেন্দুর, কটাক্ষ মমতাকেও

শুভেন্দু জানান, মুখ্যমন্ত্রী সিএএ চালু করতে দিচ্ছেন না। মমতার বিরুদ্ধে ‘ঠাকুরের নাম বিকৃত’ করার অভিযোগ জানিয়েও তোপ দেগেছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৭
Share:

নবদ্বীপে মতুয়ামেলা থেকে শুভেন্দু জানালেন, অবিলম্বে চালু হবে সিএএ। — নিজস্ব চিত্র।

ভিন্‌রাজ্যে কাজের জন্য গেলে মতুয়াদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। অথচ এ রাজ্যের অন্য বাসিন্দাদের তা হয় না। সে কারণেই অবিলম্বে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হবে। নবদ্বীপের মতুয়ামেলায় গিয়ে এ কথা জানালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিষয়টি নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তোলেন তিনি। শুভেন্দু জানান, মুখ্যমন্ত্রী সিএএ চালু করতে দিচ্ছেন না। মমতার বিরুদ্ধে ‘ঠাকুরের নাম বিকৃত’ করার অভিযোগ জানিয়েও তোপ দেগেছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু। তৃণমূল টুইটারে জানিয়েছে, মতুয়াদের প্রতি তাদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ‘অসাবধানতাবশত’ একটি কথা বলে ফেলেছেন। ভিডিয়োর সেই অংশ তুলে মতুয়াদের ‘প্রতারণা’র চেষ্টা করছেন বিরোধীরা।

Advertisement

শনিবার নবদ্বীপে ভাষণের শুরুতেই শুভেন্দু জানান, মূলত সিএএ নিয়েই তিনি কথা বলবেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১৯ সালে ঠাকুরনগরে এসে যে কথা দিয়েছিলেন, তা মেনে লোকসভা ও রাজ্যসভায় সিএএ গৃহীত হয়েছে। আমরা সকলে প্রত্যাশায় রয়েছি, অপেক্ষায় রয়েছি, আইন তৈরির পর তা কার্যকরের প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে! আমরা আশাবাদী, আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। তাই নবদ্বীপের এই সম্মেলন থেকে আওয়াজ তুলব, অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গে সিএএ চালু করা হোক।’’

শুভেন্দু অভিযোগ করেন যে, মুখ্যমন্ত্রী সিএএ-র বিরোধিতা করছেন। মতুয়াদের স্বার্থেই সিএএ দরকার জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিএএর দরকার কিসের? আমরা তো সকলেই নাগরিক। মুখ্যমন্ত্রী ১২ বছর পুলিশমন্ত্রী। আপনি তো চাকরি দিতে পারেননি। কর্মসংস্থান দিতে পারেননি। কোটি কোটি টাকায় চাকরি বেচেছেন। পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে আমাদের মতুয়া বন্ধুদের যখন পেটের টানে বাইরে চাকরির জন্য যেতে হয়, ভিসা, পাসপোর্ট করাতে যেতে হয়, বাংলাদেশে আত্মীয়দের বাড়িতে যেতে হয়, তখন ডিআইবি (ডিরেক্টর অব ইন্টালিজেন্স ব্যুরো) অফিস কেন ৭১ সালের দলিল চায়?’’

Advertisement

শুভেন্দু এ-ও জানিয়েছেন, দেশের বাকি নাগরিকদের এই সমস্যার মুখে পড়তে হয় না। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যখন চাকরির ভেরিফিকেশনের জন্য যাই, তখন কেন বলা হয়, তুমি ৭১ সালের আগে দলিল আনো। আমার আত্মীয়দের তো বলে না! শুভেন্দু অধিকারীর আত্মীয়দের তো বলে না! শান্তনু ঠাকুরের আত্মীয়দের কেন বলা হয়?’’ তিনি দাবি করেন, ‘ঠাকুর’দের সঙ্গে বাকি নাগরিকদের বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে, যা মেটানোর জন্যই সিএএ আনছে মোদী সরকার। তিনি বলেন, ‘‘এই যে মাঝখানে একটা প্রাচীর তৈরি করে রেখেছে, এর বিরুদ্ধে ১৯৪৫ সাল থেকে ঠাকুরের লড়াই। এই লড়াই সফল হয়েছে নরেন্দ্র মোদীজি, অমিত শাহজির সৌজন্যে। ব্যবস্থাপক সুব্রত ঠাকুর, শান্তনু ঠাকুর। এদের বরাবরের জন্য সম্মান করব। এদের কাজকে মর্যাদা দেব।’’

এর পরেই গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম ‘বিকৃত’ করা নিয়ে মমতাকে একহাত নিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘ঠাকুরের নাম বিকৃত করাকে ক্ষমার অযোগ্য বলে মনে করি। যে ভাষা গাজোলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এটা সমর্থন করা যায় না। এই মুখ্যমন্ত্রী সনাতন সংস্কৃতিকে বরাবর অপমান করেন। তবে আমি অন্য ধর্মকে খারাপ কিছু বলব না। কারণ আমি স্বামীজির শিষ্য। স্বামীজি বলেছেন, নিজের ধর্মের প্রতি আস্থাশীল থাকবে। কোনও সমঝোতা করবে না। অপর ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকবে।’’

যদিও মমতার যে বক্তব্য নিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে ক্ষমাও চেয়েছিলেন বোলপুরের সভা থেকে। মমতা বলেন, ‘‘তাড়াহুড়োর মধ্যে বলতে গিয়ে একটা নাম না বলে অন্য একটা নাম বলে ফেলেছি। নামটা ঠিকই ছিল। গুরুচাঁদ হরিচাঁদ ঠাকুর। আমি শুধু হরিচাঁদ বলেছি। তাই নিয়ে বাবুদের কত নাচানাচি। কত হাসাহাসি। আমি বলি দাঁড়াও। আর ক’টা মাস বাকি। মানুষকে বারমাস্যা দিয়ে, এজেন্সি দিয়ে যে অত্যাচার করেছ, আগামী দিন মানুষই তার জবাব দেবে।’’

মতুয়াদের ‘বড়মা’ বীণাপাণিদেবীর চিকিৎসা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে একহাত নিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘আপনি বলছেন, ঠাকুর’মাকে চিকিৎসা করিয়েছি। এ রকম নীচ ভাষা, এ রকমের ছোট মানসিকতা কি ক্ষমার যোগ্য? আপনি কার চিকিৎসা করিয়েছেন? ঠাকুর বাড়ির মাকে, যাঁকে আমরা চরণ ছুঁয়ে প্রণাম করি। সরকারি অর্থে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছে। আপনার পাপের টাকায় চিকিৎসা হয়নি। বাপের বলিনি।’’

এর পরেই শুভেন্দু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের জেরে ক্ষোভে ফুঁসছেন মতুয়ারা। তাঁর কথায়, ‘‘আজ এই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপনাদের মাঠে নামতে হবে। গুরুচাঁদ ঠাকুর সম্বন্ধে যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন, এর বিরুদ্ধে গোটা মতুয়া সমাজ উত্তাল। বাংলাদেশ ক্ষোভে ফুঁসছে। অসম, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, যেখানেই পৃথিবীর যে প্রান্তে মতুয়ারা রয়েছেন, পথে নেমেছেন। এমনকি, তৃণমূলপ্রেমী মমতাবালা ঠাকুরও বলতে বাধ্য হয়েছেন, উনি ভুল বলেছেন।’’

শুভেন্দু মতুয়াদের প্রতিরোধ গড়ে তোলারও ডাক দেন। নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, ‘‘বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে যেটা মতুয়াদের মূল স্রোত, সকলকে পথে নামতে হবে। সকলকে প্রতিবাদ করতে হবে।’’ শুভেন্দুর দাবি করেন যে, এই গুরুচাঁদকে ‘অপমান’ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক বই পড়েছি ঠাকুরের, অনেক জ্ঞান অর্জন করেছি। আপনাদের দলিত সমাজ হিসাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঠাকুররা চিরকাল কাজ করে গিয়েছেন। যিনি গুরুচাঁদ ঠাকুরকে অপমান করেছেন, তাঁকে গণতান্ত্রিক ভাবে বিসর্জন দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মাটিকে পবিত্র করব। পবিত্র করব। একসঙ্গে এই কাজটা সকলে মিলে করব।’’

শুভেন্দু এও জানান, মুখ্যমন্ত্রী ‘অপমান’ করলেও প্রধানমন্ত্রী মতুয়াদের ভোলেননি। তাঁর কথায়, ‘‘ ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীকে আর এক বার ধন্যবাদ জানাব। এক মাত্র রাষ্ট্রনেতা, যিনি বাংলাদেশের ওরাকান্দিতে গিয়ে ঠাকুরের জন্মস্থানে সাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করেছেন। যেটা আর কেউ করেনি। বিগত দিনে কেউ করেননি। আগামী দিনে কেউ করবেন কি না, জানি না। তার জন্য নরেন্দ্র মোদীর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement