বাঁ দিক থেকে হারুন শেখ ও রবিউল শেখ। নিজস্ব চিত্র।
এক সময় অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পড়াশোনা। সংসার চালাতে ভিন্রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ বেছে নিতে হয় তাঁকে। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। লকডাউনে কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। নদিয়ার থানারপাড়ার বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের সেই শেখ রবিউল এখন ইউটিউব তারকা। সঙ্গী তাঁর বন্ধু হারুন শেখ।
ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন থানারপাড়ার আজলানপুরের রবিউল। সেই সময় সদ্য মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল আরও অনেকটা পথ এগোনোর। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। বেছে নেন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ। ভিন্রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন রবিউল। কিন্তু সেই লড়াইয়ে বাদ সাধে লকডাউন। বেকার হয়ে রবিউলকে ধরতে হয় বাড়ির পথ। একই রকম জীবনকাহিনি রবিউলের সঙ্গী হারুনেরও। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে অর্থাভাবে আর এগোতে পারেননি তিনি। বাধ্য হন ইটভাটার শ্রমিকের কাজে যোগ দিতে।
রবিউল এবং হারুনের জীবনের দুই রেখা মিলে গিয়েছিল বছর তিনেক আগে। বেঙ্গালুরুতে কাজে গিয়ে শখপূরণের জন্য একটি ক্যামেরা কিনেছিলেন রবিউল। সেই ক্যামেরাতেই গ্রাম্যজীবনের নানা ঘটনা অভিনয় করে বন্দি করা শুরু করেন দুই বন্ধু। তাতে মিশিয়ে দেন পরিমাণ মতো হাসির উপাদান। ইটটিউব চ্যানেলে শুরু হয় তার সম্প্রচার। সাদামাটা গ্রাম্য ভাষার সেই সব ছোট ছোট হাসির নাটক ভাইরাল হয়ে যায় দিন কয়েকের মধ্যে। কয়েক মাসের মধ্যে এক লক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে যায় সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা। রবিউলের দাবি, বর্তমানে তাঁদের ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। কত টাকা আয় হয় ইউটিউব চ্যানেল থেকে? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি রবিউল বা হারুন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওই সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার থাকলে বার্ষিক আয় হতে পারে প্রায় সাত কোটি টাকা।
রবিউল এবং হারুনের গল্প উঠে এসেছে গ্রাম্যজীবন থেকে। পারিবারিক অশান্তি, বিবাহ অনুষ্ঠান, প্রেম ইত্যাদি নানা ঘটনা নিয়ে তৈরি হয় ওই নাটকগুলি। গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের গল্প বলাতেই এই সাফল্য মিলেছে বলে রবিউলের দাবি। তাঁর বন্ধু হারুন বলেন, ‘‘আমরা তেমন পড়াশোনা জানি না। ভাল করে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। তবে আমাদের কাছে প্রচুর গল্প আছে। সেই গল্প নিয়েই আমাদের সাফল্য।’’