Murder

আসানসোলের ব্যবসায়ী হত্যায় জড়িত পেশাদার খুনিরা, গতিবিধি জানতে হয় রেকিও, অনুমান পুলিশের

কে বা কারা পেশাদার খুনিদের ভাড়া করেছিলেন, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, অরবিন্দকে খুনের আগে তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে রেকি করেছিল দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২২
Share:

আসানসোলের ব্যবসায়ী অরবিন্দ ভগতকে খুনের আগে তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে রেকিও করেছিল দুষ্কৃতীরা। দাবি পুলিশের। প্রতীকী ছবি।

আসানসোলের নামী ব্যবসায়ী অরবিন্দ ভগতকে খুনের জন্য পেশাদার খুনিদের কাজে লাগানো হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তের পর এমনই অনুমান পুলিশের। যদিও কে বা কারা তাদের ভাড়া করেছিলেন, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, অরবিন্দকে খুনের আগে তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে রেকিও করেছিল দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

শুক্রবার সন্ধ্যায় আসানসোল দক্ষিণ থানার ভগৎ সিংহ মোড় এলাকায় অরবিন্দের হোটেলে ঢুকে তাঁকে একের পর এক গুলি করে দু’জন দুষ্কতী। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার সুধীরকুমার নীলকান্তম বলেন, ‘‘শুক্রবার সাড়ে ৭টা থেকে ৭টা ৪০ মিনিটের মধ্যে অরবিন্দ ভগতের হোটেলে ঢুকে তাঁর উপর গুলি চালায় দু’টি ছেলে। তাঁদের এক জন হেলমেট এবং অন্য জনের মুখে মাঙ্কি ক্যাপ জাতীয় কিছু পরা ছিল। আমাদের তথ্য অনুযায়ী, ব্যবসায়ীর দেহে মোট ৫টা গুলি লেগেছে। ২টো গুলি তাঁর বুকে লাগে। ২টো পেটে এবং ১টা গুলি লেগছে মাথায়। এলাকার সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও এখানে যা ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। অন্যান্য এলাকার ফুটেজও সংগ্রহ করছি। পুলিশ টিম গঠন করে বাকি এলাকার তদন্ত করছি আমরা।’’ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোলও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, আসানসোলে হোটেল ছাড়াও জমি কেনাবেচা, প্রোমোটিং এবং সুদের কারবারও ছিল বছর ছাপ্পান্নর অরবিন্দের। ভগৎ সিংহ মোড় এলাকায় চওড়া রাস্তার উপরে চারতলা হোটেলের পিছনেই একটি একতলা বাড়িতে সপরিবার বসবাস তাঁর। পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। এলাকায় প্রভাবশালী বলে পরিচিত অরবিন্দের সঙ্গে এর আগে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে বার্নপুরের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। তবে শুক্রবারের আগে তাঁর উপরে হামলার ঘটনার কথা শোনা যায়নি।

Advertisement

আসানসোলের হোটেলে তদন্তকারীরা। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়ির থেকে কিছুটা দূরেই অরবিন্দের বাড়ি। মলয়ের বাড়ির পিছনে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখানকার একটি চওড়া রাস্তার উপরে অরবিন্দের হোটেল। স্বাভাবিক ভাবেই এই খুনের পর মন্ত্রী তথা শহরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই খুনের ঘটনায় সমান্তরাল ভাবে তদন্ত শুরু করেছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতর, আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ, এবং রাজ্য পুলিশের সিআইডি। নীলকান্তমের দাবি, ‘‘আমাদের অনুমান, ব্যবসায়ীর গতিবিধি জানত তারা। সে জন্য রেকিও করেছিল বলে অনুমান। অরবিন্দ যে বিকেলে হোটেলে যেতেন এবং সেখানে কোন জায়গায় তিনি বসতেন, তা-ও ঠিকমতো জানত দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার হোটেলে ঢুকে সোজা সেখানেই চলে যায় তারা। এর পর তাকে গুলি করে। খবর পেয়ে আমরা ব্যবসায়ীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।’’

এই খুনের যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নীলকান্তম বলেন, ‘‘অরবিন্দ ভগতের কাজকারবার ও ব্যবসায়িক লেনদেন, সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যা যা প্রমাণ মিলছে, সেগুলি খতিয়ে দেখে তার ভিত্তিতে তদন্ত করছি আমরা।’’

আসানসোলে এর আগে বহু রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রাক্তন বাম বিধায়ক দিলীপ সরকার, বাম নেতা অর্পণ মুখোপাধ্যায়, ব্যবসায়ী যিশু বিশ্বাস এবং কানু গড়াইয়ের খুনের মামলার এখনও পর্যন্ত কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। অবশ্য ব্যবসায়ী রামলক্ষ্মণ যাদবের খুনের কিনারা করে চার্জশিটও জমা করতে পেরেছে পুলিশ। অন্য দিকে, দিলীপ সরকার এবং অর্পণ মুখোপাধ্যায় খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। ফলে অরবিন্দ হত্যাকাণ্ডে দোষীদের ধরা পুলিশ-প্রশাসন কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীলকান্তম বলেন, ‘‘আসানসোল শহরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উপর এ ধরনের ঘটনা হয়েছে। নিশ্চিত ভাবেই এটা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। যত দ্রুত সম্ভব আমরা কেসের নিষ্পত্তি করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement