কৃষ্ণনগরের ‘নির্যাতিতা’র গায়ে আগুন ধরানো হয় জীবিত অবস্থাতেই, দাবি ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
খুনের পর নয়, আগেই তরুণীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জীবিত অবস্থাতেই তাঁকে পুড়িয়ে মারা হয়, বৃহস্পতিবার কল্যাণীর জওহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল (জেএনএম) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করে বেরিয়ে এমনটাই জানালেন চিকিৎসক সৌম্যজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, জীবিত অবস্থাতেই যে তরুণীর গায়ে আগুন ধরানো হয়েছিল, ময়নাতদন্তে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তবে অ্যাসিড বা অন্য কোনও রাসায়নিক ঢেলে তরুণীকে পোড়ানো হয়েছিল বলে প্রমাণ মেলেনি। আরও কিছু তদন্ত বাকি আছে, জানান ওই চিকিৎসক।
বৃহস্পতিবার কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কৃষ্ণনগরের ‘নির্যাতিতা’ তরুণীর দেহের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘‘আমাদের আরও কিছু কাজ বাকি আছে। সব কাজ মিটলে তদন্তকারী আধিকারিককে আমরা জানিয়ে দেব। অ্যাসিডে পোড়ানোর কোনও প্রমাণ আমরা পাইনি। যা পেয়েছি, তা ‘অ্যান্টিমর্টেম বার্ন’ (অর্থাৎ জীবিত অবস্থায় পোড়ানো)।’’
তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘কিছু রাসায়নিক পরীক্ষা আমাদের এখনও বাকি আছে। তা না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারছি না। আগুনে পুড়ে গেলে এমনিতেই দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্ষরণ হয়। আমরা সে সব সংরক্ষণ করেছি।’’
উল্লেখ্য, বুধবার তরুণীর অর্ধনগ্ন এবং অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় কৃষ্ণনগরে। পরিবারের দাবি, তাঁকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে তরুণীর প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের তদন্তে আস্থা নেই পরিবারের। তাদের দাবি, তারা সিবিআই তদন্ত চায়। ইতিমধ্যেই অবশ্য এই ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য পুলিশ। এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, তদন্তে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)-এর সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে। ধর্ষণ বা গণধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবেন।
তরুণীর প্রেমিককে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁকে সাত দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। আদালতে যাওয়ার মুখে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত। তিনি দাবি করেন, ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেনই না। অভিযুক্তের মা-ও দাবি করেছেন, তাঁর পুত্র নির্দোষ।
তরুণীর ময়নাতদন্ত শেষে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, ‘‘নির্যাতিতার পরিবারের দাবি অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত হয়েছে। জেএনএম হাসপাতালে এক জন সিনিয়র অটোপসি সার্জেন উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। শুক্রবারই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা আসবেন। আশা করছি, তাঁরা আসার দু’দিনের মধ্যেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে যাব। তরুণীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে পুলিশ সাহায্য করবে। অভিযুক্তকে সাত দিনের হেফাজতে পেয়েছি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’