বিধানসভা থেকে সভা

অধীর জিতে যাওয়ার পরে তা নিয়ে ফুট কেটে জেলা কংগ্রেসের মখপাত্র জয়ন্ত দাস বলছেন, ‘‘কমলেশের বাড়ির দুয়ারে সভা করে নিজের কান কেটে এ জেলায় তা হলে ফের আসছেন শুভেন্দু!’’

Advertisement

কৌশিক সাহা

ভরতপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩৬
Share:

পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র

দলের মূল প্রতিপক্ষ কে? লোকসভা নির্বাচনের পরে ঘোষিত ভাবেই সেই তালিকায় প্রথম নামটা ছিল— বিজেপি।

Advertisement

তবে কখনও সখনও ব্যাক্তি সংঘাতের জেরে প্রতিপক্ষ যে বদলে যাচ্ছে, সম্প্রতি বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে কংগ্রেসের দুই বিধায়কের সঙ্গে পরিবহণমন্ত্রীর কাজিয়া তার বিলক্ষণ উদাহরণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

তার জেরে, দলীয় সভার ডাক দেওয়া হচ্ছে বিরোধী বিধায়কের ঘরের দোরগোড়ায়! এমনই দাবি কংগ্রেসের। পাল্টা হুমকি দিয়ে রাখছে কংগ্রেসেও— ভরতপুরে তৃণমূলের ওই সভার মোক্ষম জবাব দেবে তারাও। এই হাঁকডাকের আবহে সরগরম কান্দির ভরতপুর।

Advertisement

দিন কয়েক আগে, বিধানসভায় পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করে ওয়েলে নেমে এসে তোপ দেগেছিলেন ভরতপুরের কংগ্রেস বিধায়ক কমলেশ চট্টোপাধ্যায়। যার পাল্টা, কমলেশের বাড়ির সামনেই সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল।

দলীয় সূত্রে খবর— ওই ঘটনার পরেই কমলেশের বাড়ির কাছেই সভা করার কোনও মাঠ আছে কিনা তার খোঁজ নিতে বলেছেন শুভেন্দু। তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষকের ইঙ্গিত পেয়েই কমলেশের বাড়ির দু’শো মিটারের মধ্যেই ১৪ সেপ্টেম্বর সভার ম্যারাপ বাঁধা শুরু করেছে দল।

এ লড়াইয়ের সূত্রপাত বিধানসভায়। ৬ সেপ্টম্বর পরিবহণ বিষয়ে প্রশ্ন করেন বড়ঞার কংগ্রেস বিধায়ক প্রতিমা রজক। শুভেন্দুর কাছে তিনি জানতে চান— উত্তরবঙ্গ পরিবহন সংস্থার চালক ও কন্ডাকটর নিয়োগ কি সরকার করছে নাকি ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছে? এক ঠিকাদারের নাম করে প্রতিমা দাবি করেন, টাকা নিয়ে নিয়োগ চলেছে পরিবহণ সংস্থায়।

তার জেরেই দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় হাতাহাতি বেধে যায়। শুভেন্দু পাল্টা বলেন, “অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। না হলে ক্ষমা চাইতে হবে।” সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন কটাক্ষ— “মুর্শিদাবাদ জেলা সাফ হয়ে গিয়েছে। সামনে ভোট আসছে আর কাউকে জিততে হবে না।” এ বার তার পাল্টা প্রতিবাদ করে নেমে আসেন কমলেশ। শুভেন্দুর দিকে তাঁর ‘তেড়ে’ যাওয়ায় বেজায় চটেছেন শুভেন্দু।

বহরমপুর কেন্দ্রে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী ঘোষণার পরে শুভেন্দু জানিয়েছিলেন পরাজিত হলে ওই জেলার মাটিতে পা-ই রাখবেন না আর। অধীর জিতে যাওয়ার পরে তা নিয়ে ফুট কেটে জেলা কংগ্রেসের মখপাত্র জয়ন্ত দাস বলছেন, ‘‘কমলেশের বাড়ির দুয়ারে সভা করে নিজের কান কেটে এ জেলায় তা হলে ফের আসছেন শুভেন্দু!’’

সভার আয়োজনের ভার পড়েছে ভরতপুর ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আজাহারউদ্দিন সিজারের উপরে। সভার খুঁটিনাটি শুভেন্দু নিজেই দেখছেন বলে দাবি করেছেন আজহার। তবে, স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘বিজেপি-র বিরুদ্ধে মূল লড়াই আমাদের। সামান্য কারনে প্রতিপক্ষ বদলে গেলে চলবে কি করে!’’

তৃণমূলের এক জেলা নেতাও বলছেন, ‘‘ওই সভা নিয়ে এত হইচই করায় আখেরে কমলেশেরই লাভ হবে।’’ সে ব্যাপারে জেলা কংগ্রেসের এক তাবড় নেতার চিমটি— ‘‘বিরোধীরা তো প্রশ্ন তুলবেই, সেটাই তাদের কাজ। তার জন্য এমন পাল্টা সভা তো বিজেপি-র সংস্কৃতি। আসল প্রতিপক্ষ কে তাই ভুলে যাচ্ছে তৃণমূল!’’

এ ব্যাপারে অধীর জানিয়ে রাখছেন, ‘‘কমলেশ কিংবা প্রতিমা যা করেছে তার জন্য গর্ব বোধ করি। আমরাও পাল্টা সভা করে মানুষকে তৃণমূলের আসল পরিচয়টা দেখিয়ে দেব!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement