Kanchanjunga Express Accident

পম্পি দেখলেন, তাঁদের কামরার পরেই ট্রেন শেষ

দুর্ঘটনার পর একটা গোটা দিন পেরিয়ে গেলেও, মঙ্গলবার দুপুরে রাঙাপানি থেকে সাড়ে ছ’শো কিলোমিটারেরও বেশি দূরে নবদ্বীপ প্রফুল্লনগরের বাড়িতে বসে কাঁপুনি থামেনি পম্পির।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ০৮:৫৩
Share:

পম্পি সাহা। —নিজস্ব চিত্র।

চলন্ত ট্রেনের শৌচালয়ে ঢোকার খানিক পরেই প্রবল শব্দ আর অস্বাভাবিক ঝাঁকুনিতে নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলেন না পম্পি সাহা। এক সময় ছিটকে পড়েন। কোনও ক্রমে বেরিয়ে এসে দেখেন, তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে সেটাই তখন ট্রেনের শেষ কামরা। পিছনে আর কোন বগি ট্রেনের সঙ্গে জুড়ে নেই!

Advertisement

দুর্ঘটনার পর একটা গোটা দিন পেরিয়ে গেলেও, মঙ্গলবার দুপুরে রাঙাপানি থেকে সাড়ে ছ’শো কিলোমিটারেরও বেশি দূরে নবদ্বীপ প্রফুল্লনগরের বাড়িতে বসে কাঁপুনি থামেনি পম্পির। সোমবার ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের এস-৫ কামরায় স্বামী, সন্তান, বাবা-মা, দিদির পরিবার মিলিয়ে তাঁরাা ছিলেন আট জন। পম্পি, তাঁর স্বামী উত্তম সাহা ও সাড়ে চার বছরে ছেলে আয়ুষ। নবদ্বীপেরই সাহানগরের বাসিন্দা পম্পির মা বাসন্তী এবং বাবা অলোক দেবনাথ। আর তাঁদের বড় মেয়ে, বর্ধমানের বাসিন্দা মাম্পি ঘোষ, তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ে লাভলী ও শাশুড়ি মৌসুমী।

যে কামরায় তাঁরা ছিলেন, মালগাড়ির ধাক্কায় তার আগের কামরা পর্যন্ত দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। পম্পির কথায়, “টয়লেট থেকে বেরিয়েই বুঝতে পারি, এক চুলের জন‍্য ভয়াবহ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি। গোটা শরীর কাঁপতে শুরু করে।" হাতে, ঘাড়ে ও কাঁধে চোট পেয়েছেন তিনি। ছেলেরও চোট লেগেছে। মনে শরীরের চেয়ে মানসিক ধাক্কা অনেক বেশি। পম্পির কথায়, “এমন ভয় আমি জীবনে পাইনি। এখনও কাঁপুনি হচ্ছে। চোখ বুজলেই বীভৎস দৃশ্যগুলো ভেসে উঠছে।"

Advertisement

অলোক দেবনাথ বলেন, “আমরা আগরতলা থেকে উঠেছিলাম। সেখানে আমাদের আত্মীয়ের বাড়ি। সকালে ট্রেনে বসে আমরা গল্প করছিলাম। আচমকা প্রবল ধাক্কা। গোটা ট্রেনে যে কী হচ্ছিল তা বলে বোঝাতে পারব না। এমন কেউ নেই, যার চোট লাগেনি।” পরে ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরাগুলি ছেড়ে বাকি ট্রেন তাঁধের মতো বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের নিয়ে রওনা হয়ে যায়। দুপুরে মালদা টাউন, পরে সেখান থেকে বালুরঘাট এক্সপ্রেসে গভীর রাতে তাঁরা নবদ্বীপে ফেরেন।

কিন্তু রাত আড়াইটে নাগাদ নবদ্বীপে ফেরার পর তাঁদের জন্য রেল সামান্যতম ব‍্যবস্থাও রাখেনি বলে পরিবারের সদস্যদের আক্ষেপ। অলোক বলেন, “ওই রাতে আমরা বিধ্বস্ত, সকলে চোট আঘাতে জর্জরিত। কিন্তু আমাদের সাহায্য করার জন্য রেলের কেউ ছিলেন না। মালপত্র নিয়ে দেড় কিলোমিটার হেঁটে আমরা বাড়ি ফিরেছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement