প্রতীকী ছবি
তৃণমূল আয়োজিত জঙ্গিপুর বইমেলার মূল মঞ্চ হচ্ছে সিপিএম নেতা মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের নামে। সাংস্কৃতিক মঞ্চ হচ্ছে সিপিআই-এর প্রয়াত কাউন্সিলার অলক সাহার নামে। মৃগাঙ্কবাবু টানা ২২ বছর জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান ছিলেন। অলকবাবু ছিলেন এক সময়ের উপ পুরপ্রধান। জঙ্গিপুরে পুর নির্বাচনের আগে তৃণমূল আয়োজিত বইমেলায় সদ্য প্রয়াত সেই দুই বাম পু্রনেতার নামে মঞ্চ তৈরির ঘোষণায় শহরে সাড়া পড়ে গিয়েছে। সিপিএম সরাসরি পুরভোটের আগে একে তৃণমূলের চমক বলে কটাক্ষ করেছে। তবে বর্তমান পুরপ্রধান তৃণমূলের মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “জঙ্গিপুরে এখন যাঁরা তৃণমূল করছি তাঁরা অনেকেই মৃগাঙ্কদার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছি। তিনি দীর্ঘ দিনের পুরপ্রধানও। বইমেলার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’
জঙ্গিপুর বইমেলা শুরু মূলত মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের হাত ধরেই। বামেদের উদ্যোগেই ২০০৬ সাল থেকে সেই বইমেলা শুরু হয়। ২০১৮ সালে এই বইমেলাকে কার্যত ‘হাইজ্যাক’ করে শুরু হয় তৃণমূলের বইমেলা। সভাপতির পদ থেকে অপসারণ করা হয় মৃগাঙ্কবাবুকে। তৃণমূল বইমেলার নামকরণ করে ‘জঙ্গিপুর বইমেলা ১৩ তম বর্ষ’। তখন একই নামে পাল্টা বইমেলা করে সিপিএমও। সেই থেকে জোড়া বই মেলা হয়ে আসছে জঙ্গিপুরে। একটির সভাপতি ছিলেন মৃগাঙ্কবাবু, অন্যটির তৃণমূলের বর্তমান পুরপ্রধান মোজাহারুল ও বিকাশ নন্দ।
এ বার ১ মার্চ থেকে তৃণমূলের সেই বইমেলা হবে ৮ মার্চ পর্যন্ত। বুধবার জঙ্গিপুর পুরসভার টাউন হলে বৈঠকে স্থির হয় মেলার থিম হবে ‘আমরা সবাই নাগরিক, সংবিধান আমাদের শক্তি।’
মেলার আহ্বায়ক তৃণমূলের বিকাশবাবু বলেন, “মৃগাঙ্কবাবু দীর্ঘ দিনের পুরপ্রধান ছিলেন। রাজনীতির বাইরেও সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্যের সম্পর্ক ছিল। সদ্য প্রয়াত মৃগাঙ্কবাবুকে শ্রদ্ধা জানাতেই মেলার মূল মঞ্চের নামকরণ তাঁর নামে করা হবে। একই ভাবে বাম বোর্ডের উপ পুরপ্রধান অলকবাবুরও নামেও করা হয়েছে সাংস্কৃতিক মঞ্চের নামকরণ।”
সামনে পুর নির্বাচন। যে বইমেলাকে নিয়ে এত তরজা চলছে গত তিন বছর থেকে, এমনকি বিরোধ গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত, নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখেই কি এ বার মৃগাঙ্কবাবুর প্রভাবকে কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল?
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় বলছেন, “যাঁরা আজ মৃগাঙ্কবাবুর নাম নিচ্ছেন, তাঁরাই ২০১৮ সালে মৃগাঙ্কবাবুকে বইমেলার পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে চরম অসৌজন্য দেখিয়েছিলেন। বেঁচে থাকতে যে লোকটাকে এ ভাবে অসম্মান করা হয়েছিল, আজ তাঁকে সৌজন্য দেখানোর নামে তৃণমূলের এই চমক শহর দেখছে। সেদিন পাল্টা বইমেলার নামে যা করা হয়েছিল, আজ সে সব পাপ ধুয়ে ফেলতে এ সব করা হচ্ছে।’’