Justin Trudeau Resignation

দেশের অন্দরে জনপ্রিয়তা হারানোই আসল কারণ? নেপথ্যে ট্রাম্পের মন্তব্য? কেন পদত্যাগ ট্রুডোর?

সোমবার কানাডার একটি সংবাদপত্রে দাবি করা হয়, ন’বছর ধরে প্রধানমন্ত্রিত্ব সামলানোর পরে সরকার এবং দলের দায়িত্ব ছাড়তে চলেছেন ট্রুডো। আসন্ন নির্বাচনে পরাজয়ের আঁচ পেয়েই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রুডো ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৭
Share:
০১ ২৬

ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। জানিয়েছেন, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অফ কমন্স’-এ লিবারেল পার্টির নেতার পদও ছাড়ছেন তিনি। ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দল লিবারেল পার্টিতে অন্তর্বিরোধের জেরে এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হলেও এর নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে বলে দাবি করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

০২ ২৬

সোমবার কানাডার সংবাদপত্র ‘দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল’-এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ন’বছর ধরে প্রধানমন্ত্রিত্ব সামলানোর পরে সরকার এবং দলের দায়িত্ব ছাড়তে চলেছেন জাস্টিন ট্রুডো। আসন্ন নির্বাচনে পরাজয়ের আঁচ পেয়েই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রুডো ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

Advertisement
০৩ ২৬

সোমবার সন্ধ্যায় ট্রুডো নিজেই এ কথা জানান। আর তার পরেই ক্ষমতাসীন দলের অন্দরে ট্রুডোর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়েও তৎপরতা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন জল্পনা এবং প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু হয়েছে।

০৪ ২৬

প্রশ্ন উঠছে, কোন চাপের মুখে পড়ে ইস্তফা দিতে হল ট্রুডোকে? নেপথ্যে কি কট্টর ‘ভারত-বিরোধিতা’

০৫ ২৬

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট তথা ট্রাম্পের ‘অতি ঘনিষ্ঠ’ ধনকুবের ইলন মাস্ক।

০৬ ২৬

সম্প্রতি ট্রুডো সম্বন্ধে টেসলা কর্ণধার জানিয়েছিলেন, আগামী নির্বাচনেই নতুন প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে কানাডা। ট্রুডো আর ফিরবেন না। নিজের মালিকানাধীন এক্স হ্যান্ডলে এ কথা লিখেছিলেন তিনি। সেই ভবিষ্যদ্বাণীও সত্যি হল। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ট্রুডোকে নিয়ে মাস্কের মন্তব্য কেবল ‘সস্তা জনপ্রিয়তা’ পাওয়ার চেষ্টা।

০৭ ২৬

২০১৩ সালে কানাডার পার্লামেন্টে লিবারেল পার্টি তৃতীয় স্থানে নেমে যাওয়ার পরে দলের নেতৃত্বে এসেছিলেন ট্রুডো। ২০১৫ সালের নির্বাচনে তিনি দলকে ক্ষমতায় ফিরিয়েছিলেন।

০৮ ২৬

তবে বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে জড়িয়ে পড়েছিলেন ট্রুডো। প্রশ্ন উঠছিল তাঁর ‘ভারত-বিরোধী’ মনোভাব নিয়েও। ভারতের বেশ কয়েকটি নীতির সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তাঁর জমানায় নয়াদিল্লি-অটোয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল।

০৯ ২৬

দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরার সূত্রপাত খলিস্তানি নেতা নিজ্জরের হত্যাকাণ্ড থেকে। খলিস্তানি নেতা নিজ্জরকে ২০২০ সালে ‘সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণা করেছিল ভারত। তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারের একটি গুরুদ্বারের সামনে তাঁকে হত্যা করা হয়।

১০ ২৬

নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন ট্রুডো। বস্তুত, তার পর থেকেই দু’দেশের সম্পর্কে চিড় ধরে। ট্রুডোর ওই অভিযোগের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী অভিযোগ করেছিলেন, ভারত ভাগ করতে চাওয়া মৌলবাদী শক্তি খলিস্তানপন্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে কানাডা।

১১ ২৬

সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, নয়াদিল্লি তাঁর দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানতে চাইছে। এ ছাড়াও একাধিক বার ভারতের প্রতি সুর গরম করতে দেখা গিয়েছে ট্রুডো সরকারকে।

১২ ২৬

নিজ্জর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরাসরি ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও নিশানা করেছিল কানাডা। কানাডার সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল, নিজ্জরকে হত্যার ছক কষেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এমনও দাবি করা হয়, প্রধানমন্ত্রী মোদী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে সেই ছকের কথা জানানোও হয়েছিল।

১৩ ২৬

পাশাপাশি, গত ১৩ অক্টোবর কানাডা সরকারের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে যাঁদের স্বার্থ জড়িত, সেই তালিকায় কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয়কুমার বর্মা রয়েছেন। এর পরেই সঞ্জয়-সহ কয়েক জন কূটনীতিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। পাল্টা ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে নয়াদিল্লি বহিষ্কার করে কানাডার কয়েক জন কূটনীতিককে।

১৪ ২৬

সেই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, কানাডার আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে কট্টরপন্থী খলিস্তানি গোষ্ঠীগুলির সমর্থন পাওয়ার জন্য ট্রুডো সরকার নতুন করে নিজ্জর বিতর্ক সামনে নিয়ে আসছে।

১৫ ২৬

এর পর কানাডার মন্ত্রী ডেভিড মরিসন সে দেশের সংশ্লিষ্ট পার্লামেন্ট কমিটিকে জানিয়েছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের নির্দেশে কানাডায় খলিস্তানিদের উপর হামলা এবং ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটছে।

১৬ ২৬

সরকার বাঁচাতে খলিস্তানপন্থী নেতা জগমিত সিংহের দল নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থন নেওয়ার কারণেও দলের অন্দরে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ট্রুডো। দাবি উঠছিল, কানাডা বিচ্ছিন্নতাবাদী খলিস্তানপন্থীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। আর সব দেখেও চোখ বন্ধ করে রয়েছেন ট্রুডো।

১৭ ২৬

ট্রুডোর এই ‘ভারত-বৈরিতা’ নিয়ে নাকি সে দেশের বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ জন্মেছিল। চাপও তৈরি হয়েছিল ট্রুডোর উপর। আর সেই কারণেই এই ইস্তফা বলে মনে করছেন অনেকে।

১৮ ২৬

অন্য দিকে, ট্রুডোর ইস্তফায় ট্রাম্পের ‘হাত’ও দেখছেন অনেকে। দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার কথা শোনা গিয়েছে ট্রাম্পের গলায়। ট্রুডো ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণার পর সেই মন্তব্য আবার করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের সেই মন্তব্যকে অবশ্য ‘মশকরা’ বলেছিল কানাডা। তবে যে যা-ই বলুক, সরকারি ভাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ট্রাম্পকে নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল কানাডায়।

১৯ ২৬

গত ৩ ডিসেম্বর ফ্লরিডার মার-এ-লাগো এস্টেটে ট্রুডোকে নৈশাহারে আমন্ত্রণ জানান ট্রাম্প। ফক্স নিউজ় সূত্রে খবর, সেখানেই কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রস্তাব দেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। শুধু তা-ই নয়, জাস্টিনকে সেখানকার গভর্নর নিযুক্ত করার প্রতিশ্রুতিও নাকি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড।

২০ ২৬

মার-এ-লাগো এস্টেটের নৈশাহার শেষে নিজের সমাজমাধ্যম সংস্থা ‘ট্রুথ সোশ্যাল ডট কম’-এ কৃত্রিম মেধা ব্যবহৃত একটি ছবি পোস্ট করেন ট্রাম্প। সেখানে তাঁকে কানাডার দিকে তাকিয়ে একটি টিলার উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পাশেই উড়ছিল কানাডার পতাকা। ছবিটির নীচে ‘ও কানাডা’ কথাটি লিখেছিলেন তিনি।

২১ ২৬

মজার বিষয় হল, ‘ম্যাপল পাতার দেশ’টির জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয় ‘ও কানাডা’ দিয়ে। ফলে দু’টি দেশের সংযুক্তিকরণের জল্পনাকে একেবারে উড়িয়ে দিতে নারাজ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। জল্পনা, সেই কারণেও পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে থাকতে পারেন ট্রুডো।

২২ ২৬

তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, দেশের অন্দরে এমনিতেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিলেন ট্রুডো। বেশ কয়েক দিন ধরেই দেশের নানাবিধ সমস্যার কারণে কোণঠাসা ছিলেন তিনি। দেশের আর্থিক অবস্থা নিয়েও চাপে ছিলেন তিনি।

২৩ ২৬

মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের সঙ্গে লড়তে গিয়ে উত্তর আমেরিকার দেশটির অর্থনীতি একরকম ফালাফালা হয়ে গিয়েছে। এর পর থেকেই কানাডায় নতুন করে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। সেই আবহে ট্রুডো ইতিমধ্যেই অর্থমন্ত্রীর পদে তাঁর বিশ্বস্ত সহকর্মী ডমিনিক লেব্লুঁকে বসিয়েছেন। অনেকের মতে, এর জেরে শাসক শিবিরের মধ্যেই বিদ্রোহের জন্ম হয়েছে।

২৪ ২৬

ফলে নির্বাচন যত এগোচ্ছিল, ততই কানাডার রাজনীতিতে ধীরে ধীরে ‘একঘরে’ হয়ে পড়ছিলেন জাস্টিন। সমীক্ষকদের দাবি, দেশটির ৬৮ শতাংশ বাসিন্দাই তাঁকে অপছন্দ করেন। মাত্র ২৭ শতাংশ কানাডাবাসী ট্রুডোকে ফের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে দেখতে চেয়েছেন।

২৫ ২৬

আবার লিবারেল পার্টির প্রভাবশালী নেতা তথা প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডর সঙ্গে সংঘাত ট্রুডোর ইস্তফার অনুঘটক বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রুডোর সঙ্গে মতবিরোধের কারণেই তিন সপ্তাহ আগে ইস্তফা দিয়েছিলেন ফ্রিল্যান্ড।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement