স্ট্রং রুমের সিসি টিভিতে নজর বিভিন্ন দলের কর্মীদের। ঘাটালে। নিজস্ব চিত্র
ভোটের পালা শেষ। এ বার সকলের নজরে জেলার স্ট্রংরুমগুলি। ব্যালট কারচুপির আশঙ্কায় স্ট্রংরুমের বাইরে কড়া নজরদারি রয়েছে সব দলের। একই সঙ্গে পাহারায় রয়েছে রাজ্য ও ভিন্ রাজ্যের পুলিশ। রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রাম— সর্বত্র একই ছবি।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১টি ব্লক। প্রতিটি ব্লকে রয়েছে স্ট্রংরুম। ডিসিআরসি যেখানে হয়েছিল, সেই চত্বরেই রয়েছে স্ট্রং রুম। এই চত্বরে রয়েছে গণনা কেন্দ্রও। জানা যাচ্ছে, স্ট্রং রুম পিছু এক কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে রাজ্য পুলিশও। প্রতিটি স্ট্রং রুম পাহারায় রয়েছেন পুলিশের দু’জন করে অফিসার। সঙ্গে আটজন সশস্ত্র কনস্টেবল। মেদিনীপুর সদর ব্লকের স্ট্রং রুম রয়েছে কলেজিয়েট স্কুলে (বালক), শালবনির শালবনি হাইস্কুলে এবং কেশপুরের কেশপুর কলেজে। ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি ব্লকের জন্য পৃথক পাঁচটি স্ট্রংরুম রয়েছে। ঘাটাল ব্লকের স্ট্রংরুম হয়েছে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ে। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত ব্যালট এসে পৌঁছয় কলেজে। তারপর স্ট্রং রুম ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। রয়েছে সিসি ক্যামেরার নজরদারিও।
পাশাপাশি স্ট্রং রুমের ভিতরে ছাপ্পা এবং কারচুপির আশঙ্কায় ঘাটাল কলেজের বাইরে কড়া নজরদারি শুরু করল বিজেপি এবং সিপিএম। রবিবার সকাল থেকেই পালা করে বিজেপির পাঁচজন কর্মী দফায় দফায় কলেজের বাইরে পাহারার দায়িত্বে থাকছেন। থাকছেন বাম কর্মীরাও। ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট বলছিলেন, ‘‘ভোটের সময় প্রশাসন দাঁড়িয়ে থেকে কারচুপি করেছে। এ বারে তাই আমরা বাইরে থেকে নজরদারি রাখছি।’’ একই বক্তব্য সিপিএম নেতা উত্তম মণ্ডলেরও। দাসপুরের দু’টি ব্লকের স্ট্রংরুমের বাইরেও পাহারায় থাকছেন সিপিএম ও বিজেপির কর্মীরা। তবে শাসকদল তৃণমূলের তরফে কোথাও কোনও নজরদারি থাকছে না বলে তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে। চন্দ্রকোনা ২ ব্লকে জিরাট হাইস্কুল মাঠে স্ট্রং রুমেও বাইরে থেকে নজরদারি চালাচ্ছেন বিরোধীরা।
চন্দ্রকোনা রোডের সারদাময়ী হাইস্কুলে ডিসিআরসি কেন্দ্রে রাত থেকেই স্ট্রং রুম পাহারায় গেরুয়া শিবির। এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। গোয়ালতোড় হাইস্কুলে গড়বেতা ২ ব্লকের স্ট্রং রুম করা হয়েছে। পাহারায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর চারজন জওয়ানের সঙ্গে রাজ্যের চারজন সশস্ত্র পুলিশ। বিডিও তথা এই ব্লকের রিটার্নিং অফিসার কৃষ্ণনির্মাল্য ভট্টাচায বলেন, ‘‘স্ট্রং রুম কড়া পাহারার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ তবে রবিবার দুপুর পর্যন্ত খড়্গপুর মহকুমার স্ট্রং রুমগুলি পাহারায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি স্ট্রংরুমে ভিন্ রাজ্যের পুলিশ আনা হয়েছে বলে খবর। এমন ঘটনায় ডেবরা, সবং, পিংলা, খড়্গপুর-১, খড়্গপুর-২ ব্লকের মতো জায়গায় কারচুপির আশঙ্কা করছে বিরোধী দলগুলি। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তন্ময় দাস বলেন, ‘‘স্ট্রং রুম একেবারেই নিরাপদ নয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। ভোটের বাক্সে কারচুপির আশঙ্কা করছি।’’ নিরাপত্তায় কোথাও অভাব দেখছে না তৃণমূল। দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, ‘‘স্ট্রং রুম নিরাপদ রয়েছে।’’
এ ছাড়াও নারায়ণগড়ের নেকুড়সেনি, কেশিয়াড়ির গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ, মোহনপুরেও গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ, দাঁতন ভট্টর কলেজ ও দাঁতন ২ ব্লকের গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজে স্ট্রং রুম করেছে নির্বাচন কমিশন। নিরাপত্তায় সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিজেপির নারায়ণগড় মধ্য মণ্ডলের সভাপতি সমীরণ বাড়ৈ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও, আমাদের কর্মীরা পাহারায় থাকছে।’’ বিরোধীরা যাই বলুক, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলছেন, ‘‘নিরাপত্তা আঁটোসাঁটোই রয়েছে। স্ট্রং রুমের কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ রয়েছে।’’ অন্য দিকে, ঝাড়গ্রাম জেলায় মোট আটটি স্ট্রং রুম রয়েছে। গোপীবল্লভপুরের এসডিপিও কৃষ্ণগোপাল মিনা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি রাজ্য পুলিশও স্ট্রং রুমে থাকছে।’’ জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘মণ্ডল সভাপতিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি স্ট্রং রুমের বাইরে তিনটি শিফ্ট করে থাকেন।’’ এই প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘বিরোধীরা সবতে ভয় পায়।’’