নালিশ জানাতে শিবিরে, শাড়ি পেলেন বৃদ্ধা 

শিবিরে এসে ওই টাকা এবং শাড়ি পেয়ে খুশি সত্তর পেরনো ওই বৃদ্ধা। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্যার কথা জানাতেই এখানে এসেছিলাম। ভিক্ষা করে কোনও রকমে দিন কেটে যায় আমার। অনেক দিন পর একটা শাড়ি পেলাম।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর ও দাঁতন শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৯ ০০:৩১
Share:

স্বামী, ছেলে, বউমার অত্যাচারে ঘর ছেড়েছেন। এখন হাসপাতাল চত্বরে রাত কাটে তাঁর। দিনের বেলায় ভিক্ষা করেন। জেলার প্রতিবিধান শিবিরে এসে নিজের দুর্দশার কথা জানালেন মেনকা দোলুই নামে এক বৃদ্ধা। জেলাশাসক রশ্মি কমলের কাছে বৃদ্ধার আর্জি, ‘‘ঘরে যাতে থাকতে পারি, দু’বেলা দু’মুঠো যাতে খেতে পারি, তার ব্যবস্থা করবেন।’’ বৃদ্ধার সমস্যার দিকটি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক। সমস্যার কথা শোনার পাশাপাশি এদিন বৃদ্ধাকে ২৪০ টাকা দিয়েছেন জেলাশাসক। সঙ্গে দিয়েছেন একটি শাড়িও।

Advertisement

শিবিরে এসে ওই টাকা এবং শাড়ি পেয়ে খুশি সত্তর পেরনো ওই বৃদ্ধা। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্যার কথা জানাতেই এখানে এসেছিলাম। ভিক্ষা করে কোনও রকমে দিন কেটে যায় আমার। অনেক দিন পর একটা শাড়ি পেলাম।’’ জেলাশাসককে মেনকা জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি মেদিনীপুর সদর ব্লকের জামতলার শোলকুমারিতে। স্বামীর নাম লক্ষ্মীকান্ত দোলুই। ঘরে স্বামী ছাড়াও দুই ছেলে, দুই বউমা রয়েছেন। তবে তিনি এখন ঘরে থাকেন না। কেন? মেনকা বলেন, ‘‘স্বামীটা বদমাশ। মারধর করে। ছেলে, বউমারাও আমাকে দেখে না। তাই ঘরে থাকি না।’’ বৃদ্ধা জানান, কয়েক বছর হল তিনি ঘর ছেড়েছেন। মেদিনীপুরের এদিকে- সেদিকে ভিক্ষা করেন। রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে থেকে যান।

মেনকা শুনেছিলেন, প্রতি সোমবার প্রতিবিধান শিবির বসে কালেক্টরেটে। সাধারণ মানুষের নালিশ শোনেন জেলাশাসক। ওই কথা শুনেই সোমবার কালেক্টরেটে আসেন তিনি। শুধু মেনকাই নয়, সোমবার নালিশ জানাতে আসা আরও কয়েকজন মহিলাকে শাড়ি দিয়েছেন জেলাশাসক। কেউ ষাটোর্ধ্ব, কারও বয়স আশি ছুঁইছুঁই। জেলাশাসক মানছেন, ‘‘কয়েকজন গরিব মানুষকে শাড়ি দেওয়া হয়েছে।’’ মেনকা বলছিলেন, ‘‘জেলাশাসককে আমার অসহায়তার কথা জানিয়েছি। উনি পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন।’’

Advertisement

এ দিন দাঁতনের রবীন্দ্রভবনেও প্রতিবিধান শিবিরে অংশ নেন জেলাশাসক। অতিরিক্ত জেলা শাসক প্রণব বিশ্বাস ও খড়্গপুর মহকুমা আধিকারিক সুদীপ সরকার-সহ অন্য আধিকারিকেরা উপস্থিত ছিলেন। দুই হাজারেরও বেশি মানুষ বিভিন্ন আবেদন নিয়ে জেলা শাসকের দরবারে হাজির হন। শৌচাগার, একশোদিনের কাজের টাকা না পাওয়া, আবাস যোজনার বাড়ি, বার্ধক্য ভাতা থেকে বঞ্চিতেরা আবেদন জানান। কয়েকজন প্রতিবন্ধী, বয়স্কেরা ভাতার আবেদন জানিয়েছেন। এদিন উৎসাহ ভাতা পেয়েছেন অনেকেই। দাঁতনের শালিকোঠা পঞ্চায়েতের বাসন্তী পাত্র বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে শৌচাগার কিছুই পাইনি। বাইরে শৌচকর্ম করতে হচ্ছে।" বাসন্তী-সহ অনেকেই জেলা শাসকের কাছ থেকে দ্রুত শৌচাগার বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস পেয়েছেন। দাঁতনের কালিচণ্ডী বাজার এলাকার বাসিন্দারা জেলা শাসকের কাছে তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েতের দুর্নীতির অভিযোগ জানান। জেলা শাসক বলেন," অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ ও আবেদন শুনতেই এই শিবিরের আয়োজন। যারা সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা যাতে পরিষেবা পান সে বিষয়টি দেখা হবে।" পঞ্চায়েতের দুর্নীতি ও কাটমানি নিয়ে ব্লকজুড়ে লাগাতার ক্ষোভ বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন," বিষয়গুলি আমরা নির্দিষ্ট দফতরগুলিতে জানাব।"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement