Tourist

থিকথিকে ভিড়ে বালাই নেই মাস্কের   

অবস্থা এমনই যে ঝাড়গ্রামের সরকারি ও বেসরকারি সব অতিথিশালাতেই এখন ঠাঁই নাই অবস্থা। বর্ষশেষের সপ্তাহে একটি বাংলা ছবির শ্যুটিং চলছে চিল্কিগড় রাজবাড়িতে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:১৪
Share:

কেশিয়াড়ি প্রত্যুষা জীব বৈচিত্র্য ও শিশু বিনোদন পার্কে ভিড়। প্রায় কারও মুখেই নেই মাস্ক। নিজস্ব চিত্র

টিকাকরণ এখনও শুরু হয়নি। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুতেও ছেদ নেই। এরমধ্যেই খোঁজ মিলেছে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের (প্রকারভেদ)। কিন্তু শীতের মরসুমে ভিড় কমেনি পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে। বরং অন্য বছরের তুলনায় ভিড় বেড়েছে।

Advertisement

অবস্থা এমনই যে ঝাড়গ্রামের সরকারি ও বেসরকারি সব অতিথিশালাতেই এখন ঠাঁই নাই অবস্থা। বর্ষশেষের সপ্তাহে একটি বাংলা ছবির শ্যুটিং চলছে চিল্কিগড় রাজবাড়িতে। সেই শ্যুটিং ইউনিটের সদস্যরা থাকবেন কোথায় সেই চিন্তায় অস্থির প্রোডাকশনের লোকজন। কারণ একটানা ঘর কোথাও মিলছে না। আনলক পর্বের শুরুতে ঝাড়গ্রামে হাতে গোনা পর্যটক আসছিলেন। দুর্গাপুজোর পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সরকারি ও বেসরকারি অতিথিশালাগুলির অধিকাংশ ঘর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং হয়ে গিয়েছে। প্রায় কোথাও করোনা সচেতনতার লেশমাত্র নেই। বেলপাহাড়ির ঘাগরা, লালজল, খাঁদারানি, গাডরাসিনি, ঢাঙিকুসুম কিংবা কাঁকড়াঝোর— সব জায়গাতেই মাস্কবিহীন ভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকেরা।’’ চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দির ও সংলগ্ন ডুলুং নদীর তীরবর্তী কনক অরণ্য, ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক, গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়ি কিংবা নয়াগ্রামের রামেশ্বর মন্দির চত্বরেও একই ছবি। পর্যটন দফতর স্বীকৃত ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজমের কর্তা সুমিত দত্তও মানছেন, ‘‘বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর করোনা কালে পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে!’’

হোটেলগুলি অবশ্য করোনা বিধি মানার দাবি করছে। ঝাড়গ্রাম হোটে‌ল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার বলেন, ‘‘হোটেলগুলিতে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।’’ একই সঙ্গে তিনি জুড়ছেন, ‘‘বাইরে কে কোথায় মাস্ক পরছেন না সেটা আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়াররা নজরদারি চালাচ্ছেন।

Advertisement

সমস্যা রয়েছে পরিকাঠামোরও। কাঁকড়াঝোরে হোম স্টে চালান স্থানীয় যুবক প্রদীপ মাহাতো। তাঁর কথায়, ‘‘প্রকৃতির মাঝে বসার জায়গা, শৌচাগার, পানীয় জল এগুলির খুবই প্রয়োজন। কিন্তু সেই পরিকাঠামো না থাকায় যে সব পর্যটক কয়েক ঘণ্টার জন্য বেড়াতে আসেন, তাঁরা সমস্যায় পড়েন।’’ বেলপাহাড়িতে বেড়াতে আসা ইছাপুরের মৈত্রেয়ী রায় বলেন, ‘‘বেলপাহাড়ির সব দর্শনীয় জায়গাগুলি দেখতে গিয়ে সারা দিন কাবার হয়ে যায়। অথচ ওই সব দর্শনীয় জায়গাগুলিতে শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। নেই বসার জায়গা অথবা বিশ্রামাগার।’’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চি জানান, ঘাগরা, খাঁদারানির মতো বনভূমিতে থাকা দর্শনীয় জায়গাগুলিতে পরিবেশের ক্ষতি না করে ন্যূনতম পর্যটকদের জন্য পরিকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি রাজ্যের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি জানান, খাঁদারানিতে ওয়াচ টাওয়ার চালু হয়েছে। পর্যটকেরা সেই সেই নজর মিনার থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

পশ্চিম মেদিনীপুরেও মন্দিরময় পাথরা, দাঁতনের মোগলমারি, শরশঙ্কাদিঘি, শালবনির কর্ণগড়, গড়বেতার গনগনি, কেশিয়াড়ির কুরুমবেড়া দুর্গের মতো বেশ কিছু পর্যটন স্থল রয়েছে। এই জেলার বড় ছ’টি পার্কেও প্রচুর পর্যটক আসেন। এখানেও শীতে পড়তেই পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে এবং উধাও হয়েছে করোনা বিধি। পরিকাঠামো সমস্যা রয়েছে এখানেও। গড়বেতার গনগনিকে বলা বাংলার গ্রান্ড ক্যানিয়ন। প্রচুর পর্যটক সারা বছর সেখানে যান। সেখানেও পর্যটকদের থাকার জায়গা নেই, নেই বিশ্রামাগার। তবে এ বছর সেখানে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গনগনি যাওয়ার মোরাম রাস্তাটি পাকা করার কাজ চলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলের দাবি, ‘‘জেলার পর্যটনস্থলগুলি আরও সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement