Coronavirus

মেডিক্যালে হ-য-ব-র-ল

রাত ফুরোতেই জানা গেল, এই মেডিক্যালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি দাসপুরের যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সকালে মিলল খবর। দুপুরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ০৪:২০
Share:

দাসপুরের এক যুবক করোনায় আক্রান্ত। তবু মঙ্গলবার ওই যুবকের গ্রামের বাজারে নিয়ম না মেনেই চলল বেচাকেনা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

পেরলো না ২৪ ঘণ্টা। মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কাই সত্যি হওয়ার উপক্রম হল। করোনা আক্রান্ত যুবক ও তাঁর বাবাকে নিয়ে হুলুস্থূল চলল মেদিনীপুর মেডিক্যালে।

Advertisement

সোমবার ভিডিয়ো বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘মেদিনীপুর কিন্তু হ য ব র ল হয়ে যাবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না।’’ রাত ফুরোতেই জানা গেল, এই মেডিক্যালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি দাসপুরের যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সকালে মিলল খবর। দুপুরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, মাঝের এই সময়ে মেডিক্যালে যা চলল তাকে ‘হ য ব র ল’ বোধহয় বলাই যায়। আতঙ্কে গুটিয়ে থাকলেন রোগীর পরিজনেরা। এমনকি একাংশ চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীও। এক স্বাস্থ্যকর্মী মানছেন, ‘‘একটা ভয় তো হচ্ছিলই।’’ ভয় কিছুটা বেড়েছে ওই যুবকের বাবা এখনও মেডিক্যালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকায়।

একইরকম ভাবে আতঙ্ক দেখা গিয়েছে ওই যুবকের গ্রামেও। প্রশাসন সূত্রের খবর, আপাতত দাসপুরের ওই গ্রামটিকে পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়েছে। ওই যুবক ও তাঁর জেঠুর বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। গ্রামের লোকজনদের ঘর থেকে বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। মাইকে করে প্রচার করে গ্রামের সকলকে রোগ সম্পর্কে সাবধান করেছে প্রশাসন। যুবকের গ্রামের চারপাশ পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। লক্ষ্য রাখা হচ্ছে, যাতে গ্রামের কেউ ঢুকতে কিম্বা বেরোতে না পারেন। গ্রামের মানুষের পানীয় জল, খাবারের সমস্যা হলে, প্রশাসনকে জানাতে বলা হয়েছে। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কোনও অসুবিধা হলে প্রশাসন বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেবে। আক্রান্ত যুবকের এক পড়শির কথায়, ‘‘হোম কোয়রান্টিন বিষয়টি সম্বন্ধে গ্রামের মানুষ ততটা অবগত নয়। ওই যুবকের সঙ্গে গ্রামের অনেকেই অবাধে মেলামেশা করেছেন। তাই গোটা গ্রাম উদ্বেগে।’’

Advertisement

গত শনিবার থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালের আইসোলেশনে ভর্তি ছিলেন দাসপুরের যুবক। মঙ্গলবার সকালে জানা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত। খবর ছড়িয়ে পড়তেই হুলস্থূল পড়ে যায় হাসপাতাল চত্বরে। মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যায় ওই ওয়ার্ড চত্বর। ওয়ার্ডটির অদূরেই রয়েছে ‘মাতৃমা’। প্রসূতি এবং শিশুদের ওয়ার্ডগুলি রয়েছে ওই ভবনে। অন্য দিনে এই চত্বরে রোগীর পরিজনেদের ভিড় থাকেই। এ দিন সকাল থেকে চেনা ছবিটা ছিল উধাও। আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অন্য রোগীর পরিজনেরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁরা হাসপাতাল- কর্তৃপক্ষের কাছে বারেবারে সংশ্লিষ্ট রোগীদের ছুটি দেওয়ার আর্জি জানাতে থাকেন! হাসপাতালের এক আধিকারিক পরিজনেদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, ‘‘আপনাদের বাড়ির যে লোক ওই ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন, তাঁর যে করোনার কোনও উপসর্গ নেই, সে ব্যাপারে আপনারা কী ভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন? নিশ্চিত না হয়ে রোগীকে ছুটি দেওয়ার কথা বলছেন কি করে?’’ সদুত্তর দিতে পারেননি পরিজনেরা। তাঁরা শুধু বলেছেন একটাই কথা— ‘‘করোনা আক্রান্ত যুবকের সঙ্গে আমাদের বাড়ির লোকদের এক ওয়ার্ডে রাখবেন না!’’

দাসপুরের এক কিশোরও এই ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল। ওই কিশোর ওড়িশা থেকে ফিরেছে। ওই কিশোরের এক পরিজন বলছিলেন, ‘‘এ দিন সকালে দেখলাম, করোনা আক্রান্ত যুবক ওয়ার্ডের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছেন। এখন যে ঘোরাঘুরি করা উচিত নয়, সে কথা তাঁকে বলার মতোও ওয়ার্ডে কেউ নেই। ভাবা যায়!’’ মোহনপুরের এক যুবকও এই ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। তিনি কলকাতার বড়বাজার থেকে ফিরে অসুস্থ হন। ওই যুবকের এক পরিজনের কথায়, ‘‘ওয়ার্ডের মধ্যে অবাধে ঘোরাঘুরি করে ওই যুবক যে আরও কতজনের বিপদ ডেকে আনলেন, কে জানে!’’ করোনা আক্রান্ত যুবকের বাবাকেও এদিন হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ এসে তাঁকে ‘নজরবন্দি’ করে। পরে তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

করোনা আক্রান্ত যুবককে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠানো নিয়েও টানাপড়েন চলেছে। অ্যাম্বুল্যান্স পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে। পরে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দল গিয়ে তাঁকে বেলেঘাটা আইডি- তে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়েছে। অন্য রোগীর পরিজনেদের অসন্তোষ নিয়ে মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, ‘‘যে ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হয়েছে। অহেতুক আতঙ্কের কিছু নেই। এটা রোগীর পরিজনেদের বোঝানোও হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement