Dr. Manmohan Singh Death

এ যেন ‘তীর্থদর্শন’, বলেছিলেন মনমোহন

বোলপুর-শান্তিনিকেতনের সঙ্গে মনমোহনের তেমন যোগসূত্র না থাকলেও একাধিকবার এসেছেন তিনি এই জায়গায়।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ 

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৫২
Share:

৬ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে বিশ্বভারতীর আম্রকুঞ্জে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর আচার্য মনমোহন সিংহ। ফাইল চিত্র।

আচার্য হিসাবে কবি-তীর্থে এসে তিনি বলেছিলেন, শিক্ষার যে পাঠ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দিয়েছেন, দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা তার গুরুত্ব আজও অনুধাবন করতে পারেনি।

Advertisement

বক্তার নাম মনমোহন সিংহ। সালটা ২০০৮। বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সদ্য প্রয়াত ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন বলেছিলেন, শান্তিনিকেতনে আসা তাঁর কাছে ‘তীর্থদর্শন’-এর মতো। সেই মনমোহন সিংহের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বিশ্বভারতী। বৃহস্পতিবার রাতে মনমোহনের প্রয়াণের খবর শান্তিনিকেতনে পৌঁছনোর পরেই পৌষমেলায় বিনোদন মঞ্চের সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়। বিশ্বভারতীর এক দশকব্যাপী আচার্য মনমোহন সিংহকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তাঁর স্মরণে আগামী সোমবার একটি বিশেষ উপাসনার আয়োজন করতে চলেছে বিশ্বভারতী।

বোলপুর-শান্তিনিকেতনের সঙ্গে মনমোহনের তেমন যোগসূত্র না থাকলেও একাধিকবার এসেছেন তিনি এই জায়গায়। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সময়ে শান্তিনিকেতনে একটি ইন্টারভিউ নিতে এসেছিলেন। সেবারই প্রথম শান্তিনিকেতনে আসা তাঁর। ২০০৬ সালে ভারত সরকারের উদ্যোগে বিশ্বভারতীর সামগ্রিক উন্নয়ন প্রকল্পে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গড়ে তোলার মূলেও ছিলেন বিশ্বভারতীর তৎকালীন আচার্য মনমোহন। সেই সময় ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, সদস্য ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য অম্লান দত্ত-সহ অনেকে। বিশ্বভারতীর সামগ্রিক উন্নয়ন প্রকল্পে ২০০৭ থেকে ’১২ সালে প্রায় ২৫৪ কোটি টাকা কেন্দ্র মঞ্জুর করেছিল। সে ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের অবদানের কথা মানছেন বিশ্বভারতীর অনেকে। আচার্য হওয়ার সুবাদে ২০০৮ সালে বিশ্বভারতীতে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মনমোহন। তখন বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন রজতকান্ত রায়। সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানাতে রবীন্দ্র ভবন ও উদয়ন গৃহে যান প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সমাবর্তনে স্বাগত ভাষণও রাখেন তিনি। শান্তিনিকেতন বাড়িতকে ‘মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ স্মারক সংগ্রহশালা’ উদ্বোধনও করেছিলেন মনমোহন।

Advertisement

এর পরে বিশ্বভারতীর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সরেন বলেন, “উনি আচার্য থাকাকালীন বিভিন্ন ভাবে বিশ্বভারতীকে সহযোগিতা করেছেন। তাই ওঁর কাছে আমরা চিরঋণী। তাঁর প্রয়াণে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত।’’ বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের প্রধান মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “মনমোহন সিংহের ব্যক্তিত্বের মধ্যে ছিল মাধুর্যময় মিতভাষ। তাঁর পরিশীলিত ব্যক্তিত্ব ও সংস্কৃতি হয়তো অনেকের কাছে প্রধানমন্ত্রী পদের পক্ষে বেমানান মনে হত। কিন্তু, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই পরিশীলিত সংস্কৃতি অমূল্য এক ঐশ্বর্য।’’ তাঁর মতে, মনমোহন সিংহ ‘ঘটনাচক্রে প্রধানমন্ত্রী’ হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু তাঁর অনুচ্চকিত ব্যক্তিত্ব ‘ঘটনাচক্রে’ অর্জিত নয়, তাঁর একান্ত স্ব-ভাব। ‘‘আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে ঠিক এই জায়গাটা সহজে পূর্ণ হওয়ার নয়।”—বলছেন মানবেন্দ্র।

বিশ্বভারতীর অর্থনীতি ও রাজনীতি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক প্রণব কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নক্ষত্রের পতন বলা চলে।’’ বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, “উনি বিশ্বভারতীর পরিবারেই এক জন ছিলেন। তাঁর প্রয়াণে আমরা মর্মাহত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement