Manmohan Singh

বাস করেননি, তবু অসমের স্মৃতিতে ‘ঘরের সাংসদ’

ধারে-ভারে দুই ৭ নম্বরের কোনও তুলনাই হয় না। কিন্তু সংসদ-সদস্য হওয়ার জন্য ১৯৯১ থেকে দিসপুরের এই বাড়িই ছিল মনমোহনের ভরসা। সে বছর নরসিংহ রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হন তিনি। তখনও সাংসদ হননি।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৫২
Share:

ধারে-ভারে দুই ৭ নম্বরের কোনও তুলনাই হয় না। —ফাইল চিত্র।

দিল্লির তৎকালীন রেসকোর্স রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে দশ বছর কাটিয়েছিলেন তিনি। আরও এক ৭ নম্বর বাড়ি, যা ছিল তাঁর সংসদীয় রাজনীতির বাস্তুভিটে, সেখানে ২৩ বছরে ১০ মিনিটও থাকেননি। তবু, দিসপুরের সরুমটোরিয়ার বাসিন্দাদের গর্ব ছিল, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ‘পাড়ার লোক’। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ গেলেও অসমের সাংসদ হিসেবে আরও কিছু দিন থেকে গিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ। পরে রাজনীতির পাশাপাশি ওই বাড়িটিও ছেড়ে দিয়েছিলেন। দিসপুর সচিবালয়ের অদূরে ছোট্ট টিলার উপরে থাকা ৭ নম্বর নন্দন নগরের বাড়িটি থেকে এখন উধাও ‘ডঃ এম এম সিংহ’ লেখা ফলকটা। কিন্তু শেষ ডিসেম্বরের উৎসবমুখর মরসুমে মনমোহনের প্রয়াণ অসমের সেই পাড়ার আলোচনায় আবার তাঁকে ফিরিয়ে আনল।

Advertisement

ধারে-ভারে দুই ৭ নম্বরের কোনও তুলনাই হয় না। কিন্তু সংসদ-সদস্য হওয়ার জন্য ১৯৯১ থেকে দিসপুরের এই বাড়িই ছিল মনমোহনের ভরসা। সে বছর নরসিংহ রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হন তিনি। তখনও সাংসদ হননি। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত হয়, অসম থেকে তাঁকে রাজ্যসভার সদস্য করা হবে। কিন্তু তার জন্য তো অসমের বাসিন্দা হতে হবে। বিপত্তারণের ভূমিকা নেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়া। তাঁর নন্দন নগরের বাড়ির দু’টি ঘর ভাড়া দেন মনমোহনকে।

মনমোহন ও তাঁর স্ত্রী গুরশরণ কৌরের নামে তৈরি হয় ভাড়ার রসিদ, অসমের রেশন কার্ড। দিল্লি থেকে নাম কাটিয়ে দিসপুরের ভোটার তালিকায় তোলা হয় তাঁদের নাম। তখন অবশ্য বাড়িটির ঠিকানা ছিল, ‘হাউস নম্বর ৩৯৮৯, নন্দন নগর, সরুমটরিয়া, দিসপুর, গুয়াহাটি, জেলা কামরূপ, অসম’। পুরসভার নতুন নথিতেবাড়ির নম্বর বদলে হয় ৭। সিংহ-দম্পতির ঘরে অবশ্য আসবাবপত্র বলতে কিছু ছিল না, শুধু রাখা থাকত একটি গ্রন্থসাহিব।

Advertisement

২০০৯ সালে প্রথম বার দিসপুরের স্কুলে ভোট দিয়েছিলেন মনমোহন। শেষ বার ভোট দিতে এসেছিলেন ২০১৯ সালে। মধ্যে কখনওএকা, কখনও সস্ত্রীক ভোট দিয়েছেন তিনি। লাইনেও দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ভোট দিতে আসায় দিসপুর সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল হয়ে উঠেছিল রাজ্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভিআইপি বুথ।

ভাড়া আগাম পাঠিয়ে দিলেও এতগুলো বছরের মধ্যে মনমোহন দিসপুরের বাড়িতে পা রেখেছেন বার দুয়েক। তবু তো প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি বলে কথা! তাই ‘বহিরাগত’কে আপন করে নিয়েছিলেন শহরবাসী। মনে রাখতে হবে, অসমে বহিরাগতদের চিহ্নিত করার উপায়, ‘জাতীয় নাগরিকপঞ্জি’র কাজ শুরু হয়েছিল মনমোহনের আমলেই। সেই সঙ্গে অসম চুক্তির দাবি মেনে অসম গ্যাস ক্র্যাকার প্রকল্পের শিলান্যাস হয়ও তাঁর শাসনে। ব্রহ্মপুত্রের উপরে বগিবিল রেল-সড়ক সেতুর কাজও ত্বরান্বিত করে যান মনমোহন।

হিতেশ্বরপু্ত্র দেবব্রত শইকিয়া এখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তিনি শুক্রবার মনমোহনের দিল্লির বাড়িতে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। দেবব্রত বলেন, “অসমবাসী বরাবর তাঁদের ‘নিজেদের প্রধানমন্ত্রী’কে মনে রাখবেন। রাজ্যের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধ করতে তিনি বহু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করে গিয়েছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement