১০০ দিনের কাজ চলছে। — ফাইল চিত্র।
একশো দিনের কাজে জমির উন্নতিকরণ প্রকল্পেই খরচ হয়েছে বিপুল টাকা। তুলনায় বাঁধ নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ কম হয়েছে। পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রীয় দলের। প্রায় ৯০ শতাংশ প্রকল্পই জমির উন্নতিকরণের। দেখে বিস্মিত হয়েছে দলটি। একশো দিনের কাজ পরিদর্শনে পশ্চিম মেদিনীপুরেও এসেছিল কেন্দ্রীয় দল। পরিদর্শন শেষে দিল্লি ফিরে গিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তারা। রাজ্য হয়ে সে রিপোর্ট জেলায় এসেছে। জেলায় ওই প্রকল্পের কাজে নানা অনিয়ম দলটির নজরে এসেছে। একাধিক প্রকল্পের টাকা ফেরাতেও হতে পারে। দলটির পর্যবেক্ষণ, ওই প্রকল্পগুলির কাজ নিয়ম মেনে হয়নি। কেন্দ্রীয় দলের রিপোর্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলাশাসক আয়েষা রানি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেমন নির্দেশ দেবেন, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’
জমির উন্নতিকরণে এত প্রকল্প কেন? জেলার প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, সরকারি নির্দেশিকা মেনেই কাজ হয়েছে জেলায়। এই দফায় বাংলার ১৫টি জেলায় পরিদর্শন হয়েছে। এর মধ্যে ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরও। প্রত্যেক জেলার জন্য পৃথক কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল এসেছিল। একাধিক মহল মনে করাচ্ছে, প্রকল্পের কাজে অনিয়ম-বেনিয়ম খুঁজতেই ছিল এই পরিদর্শন। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১ থেকে ৬ অগস্ট পর্যন্ত কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শন চলেছে। এ জেলায় যে দলটি এসেছিল, সেই দলটির নেতৃত্বে ছিলেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ডিরেক্টর দেবেন্দ্রকুমার। দলটির অন্য দুই সদস্য হিসেবে ছিলেন প্রজেক্ট অফিসার মীনাক্ষি ত্রিপাঠী, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রক্ষিত ত্যাগী। মন্ত্রকের নির্দেশই ছিল, জেলায় এসে অন্তত ২টি ব্লকে যেতে হবে পরিদর্শক দলকে। ২টি ব্লকের অন্তত ৪ থেকে ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে যেতে হবে দলটিকে। গ্রাম পঞ্চায়েত পিছু অন্তত ৬টি প্রকল্প পরিদর্শন করতে হবে। যে সব প্রকল্প একশো দিনের কাজে হয়েছে। এরমধ্যে অন্তত ৩টি হবে বাঁধ নির্মাণের, ২টি জমির উন্নতিকরণের, ১টি বৃক্ষরোপণের। পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে কেন্দ্রীয় দল পিংলা এবং ডেবরা- এই ২টি ব্লকের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়েছে। সবমিলিয়ে ৩৬টি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে দলটি। কোথায় গিয়ে, কী দেখেছে, রিপোর্টে তার উল্লেখ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় দলটির পর্যবেক্ষণ, প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজই হয়েছে জমির উন্নতিকরণে। এক জায়গার মাটি কেটে আরেক জায়গায় ফেলা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে কাজের সমবন্টনও হয়নি। কোথাও বেশি প্রকল্প হয়েছে, কোথাও কম প্রকল্প হয়েছে। কেন্দ্রীয় দলের পর্যবেক্ষণ, পিংলায় গত তিন আর্থিক বছরে একশো দিনের কাজে ৫৮৬টি প্রকল্প হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩৩টিই জমির উন্নতিকরণের। শতাংশের নিরিখে যা ৯০.৯৫ শতাংশ। ডেবরায় গত তিন আর্থিক বছরে ১,০১৯টি প্রকল্প হয়েছে। এর মধ্যে ৮০৬টিই জমির উন্নতিকরণের। শতাংশের নিরিখে যা ৭৯.০৯ শতাংশ। জমির উন্নতিকরণে এত প্রকল্প ধরার প্রবণতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, রিপোর্টে স্পষ্ট জানিয়েছে দলটি। দলটির পর্যবেক্ষণ, গোবর্ধনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রত্রাপুর অঙ্গনওয়াড়ি চত্বরের জমির উন্নতিকরণে খরচ হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫৩১ টাকা। গোলগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ববৈতা অঙ্গনওয়াড়ি চত্বরের জমির উন্নতিকরণে খরচ হয়েছে ৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৮৪৬ টাকা। দলটির মতে, এ ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। কারণ, এই প্রকল্পের টাকায় কোনও স্কুল, অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানের জমির উন্নতিকরণের কাজ করা যেতে পারে না। এই দুই প্রকল্পের টাকা ফেরত নেওয়া হতে পারে।
দলটির আরও পর্যবেক্ষণ, জলচক- ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১৮- ’১৯ এ বৃক্ষরোপণের তিনটি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। একই রাস্তার ধারে। কাজটি তিনভাগে করা হয়েছে। তিনটি ক্ষেত্রেই খরচ হয়েছে যথাক্রমে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৮১৫ টাকা করে। একই রাস্তা, কাজটি কেন তিনভাগে করা হল, প্রশ্ন তোলা হয়েছে রিপোর্টে। এ ক্ষেত্রে বৃক্ষরোপণ হয়েছে নাকচিরা থেকে বড়ামতলা, বড়ামতলা থেকে অর্জুনতলা, অর্জুনতলা থেকে পিডব্লিউডি বাঁধ পর্যন্ত। দলটির পর্যবেক্ষণ, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় নির্মিত একাধিক রাস্তা বেহাল হয়ে গিয়েছে। কাজ হয়েছে নিম্নমানের। অথচ, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আরও কিছু অনিয়ম পরিদর্শক দলের নজরে এসেছে। কিছু কাজের রেকর্ড, ফাইল ঠিকঠাক দেখভাল হয়নি। জেলায় পরিদর্শনে এসে গত বছরও একশো দিনের কাজে বেশ কিছু অনিয়ম পেয়েছিল কেন্দ্রীয় দল।