অর্ণব দাম। — ফাইল চিত্র।
অবশেষে কাটছে জট। সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে ভর্তি হতে পারেন জেলবন্দি মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, সোমবার বিকেল ৩টের সময় সেখানে পিএইচডির জন্য অর্ণবের কাউন্সেলিং হবে। তার পরেই তিনি গবেষণা করতে পারবেন। মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে কারা দফতর থেকে পাঠানো চিঠির জবাবও এসে যাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে।
রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে যাবে তাঁদের পাঠানো চিঠির জবাব। এই আবহে শনিবার সকালে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে ফোনে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য গৌতম চন্দ্রের দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয়। সেখানে অর্ণবের ভর্তি প্রক্রিয়ার জট কাটানো নিয়েই কথা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই কুণালই উপাচার্যের বিরুদ্ধে অর্ণবের গবেষণায় বাধা দিচ্ছেন বলে আগে অভিযোগ তুলেছিলেন।
গত ২৬ জুন পুলিশি প্রহরায় ইন্টারভিউয়ের জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হন অর্ণব। গত ৫ জুলাই মেধাতালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাস বিভাগে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৬.৮৬৭০ নম্বর পেয়ে প্রথম হন অর্ণব। এই বিভাগে গবেষণা করার জন্য ইন্টারভিউয়ে ২৪৯ জনকে পিছনে ফেলে প্রথম হন অর্ণব ওরফে বিক্রম। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, মেধা তালিকায় থাকা পরীক্ষার্থীদের জন্য ৯ জুলাই কাউন্সেলিংয়ের দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ৮ জুলাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, অনিবার্য কারণে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া স্থগিত হয়েছে। এই নিয়ে তৃণমূল আঙুল তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দিকে। উপাচার্য জানান, অর্ণবের গবেষণার বিষয়ে তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। শুধু এই নিয়ে দু’টি প্রশ্নের জবাব জানতে চেয়ে হুগলি জেলের সুপারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন হুগলি জেলে রয়েছেন অর্ণব। সেই চিঠির জবাব এলে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। হুগলি জেল সূত্রে জানা যা, চিঠিটি কারা দফতরে পাঠানো হয়েছে। কারামান্ত্রী অখিল জানিয়ে দেন, অর্ণবের গবেষণার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে চিঠির জবাব।
চিঠিতে কী জানতে চেয়েছিলেন গৌতম? তাঁর কথায়, “আমি হুগলির জেল সুপারকে চিঠি দিয়ে দু’টি প্রশ্ন করেছিলাম। প্রথম প্রশ্ন, কী ভাবে অর্ণব বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিয়মিত ক্লাস করবেন? সে ক্ষেত্রে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি কে বা কারা দেখবেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন, অর্ণবকে পিএইচডি করতে দেওয়ার বিষয়ে জেল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা অনুমোদন রয়েছে কি না।” উপাচার্য এও জানান,অর্ণব যেহেতু সংশোধনাগারে রয়েছেন, তাই কারা কতৃপক্ষের ‘নো অবজেকশন’ দরকার। কারামন্ত্রী অখিল জানিয়ে দেন, তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। সোমবারই পাঠানো হবে জবাব।
খড়্গপুর আইআইটির মেধাবী ছাত্র অর্ণব পড়াশোনা ছেড়ে সিপিআই (মাওবাদী)-এর রাজনৈতিক মতবাদে আকৃষ্ট সেই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। গত ফেব্রুয়ারিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই হুগলি জেলা সংশোধনাগারে বন্দি। তিনি জেলে বসেই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা সেট-এ উত্তীর্ণ হন। তার পরে জেল থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে গিয়ে পিএইচডির প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তার পরেও গবেষণার কাজ শুরু করতে পারেননি তিনি। সেই নিয়েই শুরু হয় টানাপড়েন। তৃণমূল নেতা কুণালের অভিযোগ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যই বাধা দিচ্ছেন। ঘটনাটি নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ভূমিকায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও ‘ক্ষুব্ধ’ বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়। কুণাল জানান, ওই দুই মন্ত্রী আলোচনা করেছেন। সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। গবেষণায় যাতে সুবিধা হয়, সে কারণে অর্ণবকে হুগলি থেকে বর্ধমান জেলে সরানো হবে। কারামন্ত্রীও তাতে সায় দিয়েছেন। তার পর সোমবার শুরু হচ্ছে ভর্তির প্রক্রিয়া।