মুকুটমণি অধিকারী এবং কৃষ্ণ কল্যাণী। —ফাইল চিত্র।
ফিরছেন, তাঁরা ফিরছেন। সপ্তদশ বিধানসভাতেই। এবং একই কেন্দ্র থেকে জিতে এসে। তবে এ বার তৃণমূলের হয়ে। মাস কয়েক আগে দু’জনেই খাতায়কলমে ছিলেন বিজেপি বিধায়ক। তবে দলবদল করে লোকসভা ভোটের আগে বাংলার শাসকদলে যোগ দিয়েছিলেন দু’জনই। ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন। পরাজিত হন দু’জনে। তার পর নিজেদের ছেড়ে দেওয়া কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়ে জয়লাভ। ওই দু’জন হলেন রায়গঞ্জ থেকে জয়ী কৃষ্ণ কল্যাণী এবং রানাঘাট দক্ষিণ থেকে জয়ী মুকুটমণি অধিকারী।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই দু’জনই জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির প্রতীকে। সেই একই বিধানসভার কার্যকালে তাঁরা ফিরছেন শাসকদলের সদস্য হয়ে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন কৃষ্ণ। রায়গঞ্জ বিধানসভা থেকে তাঁকে প্রার্থী করে বিজেপি। উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে ওই আসলে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জিতে রায়গঞ্জ থেকে বিধায়ক হন পেশায় ব্যবসায়ী কৃষ্ণ। কিন্তু জয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই বিজেপির প্রতি ‘মোহভঙ্গ’ হয় তাঁর। কলকাতায় তৎকালীন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে যোগ দেন তৃণমূলে।
কৃষ্ণর বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শেষ পর্যন্ত সেই মামলা পৌঁছয় আদালতে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ লোকসভা থেকে কৃষ্ণকে টিকিট দেয় তৃণমূল। তাই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভোটে লড়াই করেন তিনি। কিন্তু বিজেপি প্রার্থী কার্তিক পালের কাছে পরাজিত হন তিনি। কৃষ্ণের পদত্যাগে শূন্য হয়ে যাওয়া রায়গঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে ফের তাঁকেই প্রার্থী করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গিয়েছে বিজেপি প্রার্থী মানসকুমার ঘোষকে ৫০ হাজার ৭৭ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন কৃষ্ণ। অথচ, কয়েক মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে এই রায়গঞ্জ বিধানসভাতেই ৪৬ হাজার ৭৩৯ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন তিনি।
একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রানাঘাট দক্ষিণের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী চিকিৎসক মুকুটমণির ক্ষেত্রেও। লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রাক্তন সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে ফের টিকিট দেওয়ায় ক্ষোভে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথের বিরুদ্ধে তাঁকেই প্রার্থী করে তৃণমূল। মুকুটমণিকে হারিয়ে, দ্বিতীয় বারের জন্য সংসদে গিয়েছেন জগন্নাথ। লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়কের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন মুকুটমণি। তাই পরাজিত হওয়ার পর উপনির্বাচনে তাঁকেই টিকিট দেয় তৃণমূল। শনিবার ফলাফল ঘোষণায় দেখা গিয়েছে বিজেপি প্রার্থী মনোজকুমার বিশ্বাসকে ৩৯ হাজার ৪৮ ভোটে হারিয়ে জিতেছেন মুকুটমণি। কৃষ্ণের মতোই নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে পিছিয়ে পড়েছিলেন এই চিকিৎসক রাজনীতিক। ৩৬ হাজার ৯৩৬ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে সেই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টে গিয়েছে।
আর এই দুই আসনের ফলের নিরিখে আবারও বিধানসভায় প্রত্যাবর্তন হচ্ছে কৃষ্ণ-মুকুটমণির। বঙ্গ রাজনীতির কারবারিদের মতে, এমন ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ইতিহাসে কোনও নতুন ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক অতীতে বিরোধী দলের বিধায়ক দল ছেড়ে শাসকদলের টিকিটে দাঁড়িয়ে ফের বিধায়ক হয়ে বিধানসভায় ফেরার মতো ঘটনা না-থাকলেও, ষাট-সত্তরের দশকে এমন ঘটনার নজির রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়।