প্রতীকী ছবি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত সব হোমকে ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট ২০১৫’ অনুযায়ী পরিকাঠামো উন্নত করতে হবে। আর হোমগুলির সেই পরিকাঠামোর উন্নয়ন দেখে নতুন আইনে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে রাজ্যগুলিকে। সেই নির্দেশ না-মানায় বাংলার কয়েক হাজার শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখোমুখি!
একটি সংস্থা চলতি বছরেই আরটিআই বা তথ্য জানার অধিকার আইনি রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের কাছে কিছু তথ্য জানতে চায়। তার উত্তরে বলা হয়েছে, এ রাজ্যের ২৪১টি চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউট (সিসিআই) বা হোমের মধ্যে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটিরই রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। ২০১৫ সালের জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন নেই ২২৫টি সিসিআই-এর। শুধু তা-ই নয়, রেজিস্ট্রেশন না-থাকা সত্ত্বেও তারা সরকারি অনুদান পেয়ে যাচ্ছে।
অথচ সম্পূর্ণা বেহুরার দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলায় ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন আইন মেনে রেজিস্ট্রেশন না-করালে হোমগুলির রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ হোমগুলি বন্ধ করতে হবে। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে গেলেও এ রাজ্যের বেশির ভাগ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোম চালানোর নতুন রেজিস্ট্রেশন পায়নি। কাউকে কাউকে হোম চালানোর জন্য দফতর থেকে ছ’মাসের জন্য প্রভিশনাল সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। তার মেয়াদও শেষ। ফলে সংশ্লিষ্ট হোম-কর্তৃপক্ষের এখন মাথায় হাত। বিশেষ করে এইচআইভি পজিটিভ, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং অনাথ বাচ্চাদের নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন হোমের কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছেন না, এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা কী করবেন।
অনেক হোমের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬-১৭ সালে। পাচারের পরে উদ্ধার করা মেয়েদের নিয়ে কর্মরত কলকাতার এমনই একটি হোম জানাচ্ছে, ২০১৬ সালেই তাদের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। ২০১৭ সালে নতুন জুভেনাইল জাস্টিস আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনের জন্য তারা আবেদন করলেও দফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন মেলেনি এখনও। জলপাইগুড়ির এক হোমের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, তাঁরা বারবার রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের কাছে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি লিখেছেন। তাঁদের বলা হয়েছে, কেউ পরিদর্শন করতে এলে তাঁরা যে আবেদন করেছেন এবং সরকার যে তাতে সই করে আবেদনপত্র গ্রহণ করেছে, সেই কাগজপত্র যেন দেখিয়ে দেন! ওই হোম-কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘আবেদন করা আর রেজিস্ট্রেশনের পাওয়া তো এক নয়। অথচ রাজ্যের দফতর থেকেই আমাদের এ কথা বলা হল!’’
অনেক স্পেশ্যাল অ্যাডপশন এজেন্সি বা ‘সা’ (যে-সব হোম থেকে বাচ্চা দত্তক দেওয়া হয়) নতুন আইনে রেজিস্ট্রেশন পায়নি। এ ক্ষেত্রে দফতরের গড়িমসিকেই দায়ী করেছেন হোম-কর্তৃপক্ষ। পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে সমাজকল্যাণ ডিরেক্টরেটের এক কর্তার দাবি, ‘‘বিভিন্ন হোমের কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র জমা দিতে দেরি করছেন। কখনও কখনও একটা নথি দিচ্ছেন তো অন্যটা দিচ্ছেন না। তাতেই দেরি হচ্ছে। সেই জন্য আমরা প্রভিশনাল সার্টিফিকেট দিয়েছি।’’ বক্তব্য জানতে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএসেরও উত্তর দেননি।